আলোচিত বিচারক কামরুন্নাহারকে প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন
১৪ নভেম্বর ২০২১ ২২:২৩
ঢাকা: রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের মামলার রায় দেওয়া ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের ঘোষণা এসেছিল আগেই। এবারে তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) রাতে পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক (জেলা জজ) মোছা. কামরুন্নাহারকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হলো।
আরও পড়ুন-
বিচারিক ক্ষমতা হারালেন রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার বিচারক
আদালতে এসে কামরুন্নাহার জানলেন, তার বিচারিক ক্ষমতা নেই
‘রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় চরমভাবে জেন্ডার বৈষম্য তৈরি করেছে’
৮০ বিশিষ্টজনের বিবৃতি, ধর্ষণ মামলায় রায়ের পর্যবেক্ষণ অসম্মানজনক
এর আগে, রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারির ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) আলোচিত রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। রায়ে মূল আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস পান।
মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি।’ অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে আলামত পাওয়া যায় না উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পরে ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে ‘পরামর্শ’ও দেন এই বিচারক।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের এই পর্যবেক্ষণ ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনায় জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান। আইনজীবী, নারী অধিকারকর্মী, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানীসহ সচেতন মহলও এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘৭২ ঘণ্টা পরে কেন, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যখনই অভিযোগ দেবেন, তখনই সেই অভিযোগ পুলিশকে নিতে হবে।’ পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মামলা রুজু করার জন্য বিধিনিষেধ বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে, যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেও এই পর্যবেক্ষণকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন। শনিবার (১৩ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘উনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক।’ একই অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী জানান, ওই বিচারকের ক্ষমতা সিজ (কেড়ে নেওয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেবে আইন মন্ত্রণালয়।
এর ধারাবাহিকতাতেই রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেন, বিচারক কামরুন্নাহার বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ করার সুযোগ হারিয়েছেন। রাতে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তাকে কর্মস্থল থেকেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
আইন মন্ত্রণালয় টপ নিউজ ধর্ষণ মামলার রায় বিচারক কামরুন্নাহার বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার রায়ের পর্যবেক্ষণ রেইনট্রি ধর্ষণ মামলা