কাজে আসছে না ১৮ কোটি টাকার ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট
১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩১
রাজশাহী: রাজধানী ঢাকার পর রাজশাহীতে বসানো হয়েছিল ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট। পানি, খরচ আর সময় বাঁচিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ট্রেন ওয়াশ বা পরিষ্কার করার লক্ষ্য নিয়েই গত ৮ নভেম্বর প্ল্যান্টটি উদ্বোধন করা হয়। এটি বসাতে খরচ হয় ১৮ কোটি টাকা। কিন্তু উদ্বোধনের পর কার্যক্রমের শুরু থেকেই এখানে দিনে মাত্র একটি করে ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে। সেই ট্রেন ওয়াশের সময়টুকু বাদ দিয়ে দিনের বাকিটা সময় প্ল্যান্টটি থাকে তালাবদ্ধ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্ল্যান্টটিতে এখন দিনে মাত্র একটি ট্রেন ওয়াশ করা হয়। বাকি আটটি ট্রেন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ওয়াশ করেন ঠিকাদারের কর্মীরা। শানটিং সমস্যার কারণে অটোমেটিক প্ল্যান্টে সব ট্রেন ওয়াশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তাছাড়া ট্রেনের শিডিউল ঠিক রেখে এখানে ট্রেন ওয়াশ করা যায় না বলেও মন্তব্য তাদের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে ট্রেনের দুই পাশ, ছাদ ও আন্ডারগিয়ার সুচারূভাবে পরিষ্কার করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েতে দু’টি অটোমেটিক প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর একটি বসেছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে, দ্বিতীয়টি রাজশাহীতে। বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দুইটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
রেলওয়ে সূত্র আরও বলছে, এই প্ল্যান্টগুলো প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করতে সক্ষম। ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশই রি-সাইকেল করে ফের ব্যবহারোপযোগী করে প্ল্যান্টটি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসা এই প্ল্যান্ট অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল— দুই মুডেই ব্যবহার করা যায়। গড়ে ১০ মিনিটে ১৪ কোচের একটি ট্রেন পরিষ্কার করা যায় এখানে। অত্যাধুনিক এই প্ল্যান্ট পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী। গত ৮ নভেম্বর প্ল্যান্ট দু’টির উদ্বোধন হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরপর ১১ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর প্ল্যান্টটির কাজ শুরু হয়েছে। এখন দিনে একটির বেশি ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে না। একটি ট্রেন ওয়াশ করার পর প্ল্যান্টটি দিনভর তালাবদ্ধই থাকছে। ফলে স্টেশনের ওয়াশফিল্ডে প্রতিদিন ট্রেনের ট্রিপ শেষে অন্য ট্রেনগুলোর নিয়মিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ট্রেনের ভেতরের ও বাইরের অংশ পরিষ্কারের কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় লাগে অন্তত এক ঘণ্টা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামান ট্রেডার্সের মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে। এতে ট্রেন ওয়াশের জন্য ঠিকাদারকে টাকাও দিতে হচ্ছে। অথচ প্ল্যান্টে ট্রেন ওয়াশ করলে এই বাড়তি খরচটুকু সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে বাঁচবে সময়ও। কোনো এক ‘অজানা’ কারণে অটোমেটিক প্ল্যান্টটি ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছেন প্ল্যান্টটির দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্ল্যান্টটি এমন জায়গায় বসানো হয়েছে যে শানটিংয়ের সমস্যা হয়। অর্থাৎ এখানে একটি ট্রেন ঢোকানো ও বের করার সময় লাইনে অন্য ট্রেন চলে আসে। ফলে সমস্যা হয়। এই সময়গুলো ছাড়া অন্য সময় ট্রেন ওয়াশ করতে গেলে আবার শিডিউল ঠিক থাকে না। এর ফলে এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ঠিকাদারের মাধ্যমে ট্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে।
এ সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়েও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন আরিফুল ইসলাম।
সারাবাংলা/টিআর