‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহংকার’
২১ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৫৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহংকার। আপনারা যেন শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারেন, সেটাই বিশ্বাস করি।
রোববার (২১ নভেম্বর) সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে ঢাকা সেনানিবাস সেনাকুঞ্জে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রতিমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, সকালে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসের ‘শিখা অণিবার্ণে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন। পরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনিবার্ণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর ঢাকা সেনানিবাস আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা/ তাদের উত্তরাধিকারদের সংবর্ধনা প্রদান এবং ২০২০-২০২১ সালের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদক প্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে রয়েছে আমাদের সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন। আমার দুই ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয় এবং এরই মাধ্যমে এদেশে একটি আধুনিক বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। তিনি ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন।’ ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সামরিক একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপণী কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু অভিবাদন গ্রহণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
টানা মেয়াদে সরকার গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর থেকে অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করে চলছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। গত ১৩ বছরে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি।”
দেশের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়: প্রধানমন্ত্রী
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামাদি, আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক অয়েরলিকন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছি। আমরা নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও মেরিটাইম হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে ‘সোয়াড্স’ গঠন করেছি। পটুয়াখালীতে বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি, কক্সবাজারে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, “বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র সংযোজন করেছি। লালমনিরহাটে এভিয়েশন ও এ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ নির্মাণ করেছি। ‘এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টার’ নির্মাণ করেছি। সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে আমরা সিএমএইচসমূহে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন ডিপার্টমেন্ট ও ওয়ার্ড সংযোজন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে ঢাকা সিএমএইচ-এ জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকেয়াকে পৃথকীকরণের মত একটি জটিল ও অস্ত্রোপাচার সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।”
মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত বলেও মনে করেন তিনি। পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যগণ বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সে বিষয়েও প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
বর্তমানে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ফের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণের বাহিনী অর্থ্যাৎ পিপলস আর্মি’। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহংকার। আপনারা যেন শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারেন, আমি সেটাই বিশ্বাস করি।” এসময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/এমও