ঢাকা: দেশের হাসপাতালগুলোতে একজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে নিজ পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৮.৫০ ভাগ অর্থ। এর মধ্যে ওষুধের খরচ পড়ে ৬৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় পাওয়া এই তথ্যে দেখা যায় স্বাস্থ্যসেবার এক তৃতীয়াংশ খরচও দেয় না সরকার।
রোববার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘নিজ পকেট থেকে গৃহস্থালি ব্যয় সংকোচনের কৌশল’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। চিকিৎসা ব্যয়বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু জানানোর জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, রোগীকে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয় ওষুধ খাতে, অর্থাৎ ৬৪ ভাগ। এরপর হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ২৩ ভাগ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় হয় ৮ ভাগ অর্থ। আর নিজ পকেট থেকে ব্যয় বাড়ার কারণে ১৬.৪ ভাগ রোগী প্রয়োজন থাকলেও চিকিৎসা নিতে পারেন না।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ২০১২ সালে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় ছিল ৬৪ ভাগ। ২০৩২ সাল নাগাদ এই ব্যয় ৩২ ভাগে নামিয়ে আনতে কৌশলপত্র নেওয়া হলেও তা দিনে দিনে বাড়ছেই।
রোগীর ব্যয় কমাতে ‘ই-হেলথ’ চালুর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমন্বিত সেবা চালু, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করাসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আউট অব পকেট বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিতে গেলে ব্যক্তির পুরো খরচের ৬৮ ভাগ খরচ তার পকেট থেকে। এর মধ্যে ওষুধের খরচ পড়ে ৬৪ ভাগ। আমরা সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছি যেন এই খরচ আরও কমিয়ে আনা যায়। এজন্য আমাদের ডাক্তার এবং নার্সদেরকে আরও সচেতন হতে হবে এবং সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে। আমাদের কোয়ালিটি বাড়াতে হবে এবং ইথিক্যাল হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধের খরচ সবচেয়ে বেশি। ওষুধের খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে সার্ভিস কস্ট বেশি। কেন আউট অব পকেট বাড়ে— নন কমিউনিকেবল ডিজিজের কারণেও খরচ বাড়ছে। কারণ, এগুলো লাইভ লং ডিজিজ। সারা জীবন ওষুধ খেতে হয় তাই খরচ বাড়ছে। অপ্রয়োজনে বেশি অ্যান্টবায়োটিক খায়। অপ্রয়োজনে টেস্ট করার কারণে ওপিপি বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তারদের বলছি, অপ্রয়োজনে যেন টেস্ট না দেন। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় খরচ বাড়ছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ক্যান্সার, হার্টের চিকিৎসা আরও উন্নত হওয়া দরকার। আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে। সেগুলো হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া কমবে। প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তাদের ফি সহনশীল পর্যায়ে রাখা যায় কিনা, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। রিসোর্সে যেমন যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার ও কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করছে, ফলে খরচ কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওষুধ ও টেস্ট ইথিক্যাল হতে হবে। আমাদের বাজেট অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। জিডিপির ২.৪% হেলথে ব্যয় করে। স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির অংশ বাড়ানো প্রয়োজন। করোনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট ছিল। টেস্ট ও চিকিৎসায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। করোনায় কেউ দেশের বাইরে যাননি। কোভিড নন কোভিড সব ট্রিটমেন্ট দেশে নিয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়েছে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালীন আমরা হিসাব করে দেখেছি যে, একটি রোগীর পেছনে সাধারণভাবে প্রত্যেক দিন খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সরকার বিনামূল্যে এ সময় চিকিৎসা দিয়েছেন এবং মিনিমাম ৮০ থেকে ৯০ ভাগ করোনায় আক্রান্ত মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা ৯ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। ৫ কোটি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছে এবং চার কোটি মানুষ প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে করোনার ভ্যাকসিন দিচ্ছি এবং স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি ।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।