খালেদা জিয়ার চিকিৎসা: ‘চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা’
২৩ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৩০
বর্তমান সময়ে বিএনপির কাছে একটি আলোচিত বিষয় তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো। অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বিএনপির এখন সব থেকে বড় ইস্যু বেগম জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা। আপাতত তাই স্বাভাবিক। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। সব মানুষেরই চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। একজন সাবেক প্ৰধানমন্ত্রীর যেমন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে তেমনি একজন অতি সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া একজন পঁচাত্তর ঊর্ধ্ব বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানিত মানুষ। এই বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ ধরা অস্বাভাবিক নয়। বিএনপি এবং বেগম জিয়ার পরিবার তার যথাপযুক্ত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। দেশে তাদের পছন্দমতো হাসপাতালে বেগম জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। সরকারও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে। খালেদা জিয়া বর্তমানে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে সরকারের বিশেষ অনুগ্রহে জেলখানার পরিবর্তে বাসায় অবস্থান করছেন। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রায় শুরুতেই সরকারের বিশেষ নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে এই বয়সে অসুখ-বিসুখ থাকা অস্বাভাবিক নয়। এছাড়াও আগে থেকেই তার নানা ধরনের অসুখের কথা দেশবাসী জানে।
বিএনপির শত রকমের দাবির মধ্যে এখন নতুন দাবি, তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া। এ নিয়ে বিএনপি রীতিমতো একটি আন্দোলনের মুডে আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা করানো, না কি তাদের নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসা করানোর দাবি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা তা দেশবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। দেশেই বেগম জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা হচ্ছে। তাছাড়া বেগম জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আইন অনুযায়ী তার সবকিছু হওয়ার কথা। সরকার তথা আইনমন্ত্রী বলছেন, আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো আইনে নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষত্রে উদাহরণ দিচ্ছে, অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়ার আমলে তারই ফরমায়েশি রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেলখানায় বন্দি জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রবের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া। যে মামলায় কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয় জিয়া। সেই একই মামলায় রব যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তখন কারান্তরীণ।
বিএনপি তাদেরই সামরিক দুঃশাসন আমলের চরম অনৈতিক এক উদাহরণ এবার তাদের নেত্রীর ক্ষেত্রে চাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এ ব্যাপারে বিএনপির দাবিকে সমর্থন করে গলা বাজাচ্ছেন আ স ম রব নিজেই। এ যেন ‘চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা’। এক দণ্ডপ্রাপ্ত রব পক্ষ নিয়েছে আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার।
স্বৈরাচার জিয়ার অবৈধ সরকারের সাজাপ্রাপ্ত আসামি যখন আ স ম রব সাহেবেরা ফরমায়েশি রায় বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং পরে রাতের আঁধারে জিয়ার সঙ্গে আঁতাত করে চিকিৎসার নামে পছন্দের দেশে পারি জমিয়েছিলেন। আজ রব সাহেবই কি না সাক্ষী দিচ্ছেন দণ্ডিত আসামির বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার উদাহরণ না কি তিনি নিজেই! রব সাহেব আঁতাত করে, কত টাকার বিনিময়ে কর্নেল তাহেরসহ জাসদের নেতাদের সঙ্গে বেইমানি করে, জিয়ার এই বিদেশে চিকিৎসা নামক উপহার নিয়েছিলেন তা দেশবাসীকে জানেন। আরও জানে কতদিন ধরে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং কবে দেশে ফিরে এসেছিলেন? আর দেশে ফিরে তিনি অবশিষ্ট যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করেছেন কি না? ক্ষমতা হারা বিএনপি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আ স ম রব কেন তার জীবনের কলঙ্কিত এক অপসকামী সুবিধাবাদী চরিত্র জনসম্মুখে নিয়ে এলেন? বিএনপি ও আ স ম রব ইতিহাস বিকৃতি করলেও দেশবাসী জানে পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর অবৈধ শাসক জিয়া কী কী অন্যায় করেছিল। আ স ম আব্দুর রব কীভাবে দণ্ডিত আসামি হয়ে সরকারের টাকায় বিদেশ গেল। একই মামলায় মাহমুদুর রহমান মান্না কীভাবে বেকসুর খালাস পেল। কর্নেল তাহেরকে কীভাবে ফাঁসি দিল। কীভাবে জিয়া হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিনা বিচারে হত্যা করল। আ স ম রবের বিদেশ যাওয়ার সঙ্গে এর উত্তর দিলে দেশবাসী উপকৃত হতো।
বিএনপি এখন তাদের অতীত অপকর্মের উদাহরণ নিজেদের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। বিএনপি কথায় কথায় সরকারকে গালি দিয়ে অবৈধ সরকার বলছে। আবার তাদের অতীতের পাপ কাজের উদাহরণ দিয়ে সরকাররের কাছ থেকে দাবি আদায়ের হুমকিও দিচ্ছি। হয়তো কয়দিন পর বলবে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দণ্ডিত পলাতক আসামি তারেক রহমানকেও দণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় দেশে নিয়ে এসে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার। সেক্ষত্রে হয়তো একত্তোরের নরঘাতক গোলাম আজমের উদারণ দেবে তারা! বিএনপির এই পাগলামির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ভিপি নূর, ডা. জাফরুল্লাহ ও অপ্রত্যাশিতভাবে রেজা কিবরিয়া! দাবি এখন একটাই, খালেদাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া। তা যেভাবেই হোক। বিএনপি খালেদার চিকিৎসা চাইলেও অন্যরা চাচ্ছে এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সরকারের পতন ঘটানো! খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হোক বা না হোক। হুমকি দিচ্ছে, বেগম জিয়ার কিছু হলে সরকারের বারোটা বাজিয়ে দেবে! মান্নাও বলছে আগের চোরদের এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল এখন এই চোরকেও সেই সুবিধা দিতে হবে! হায়রে আবদার!
বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সরকারসহ সবাই চায়। সরকার সে ব্যবস্থাও করেছে। বরং আজ প্রশ্ন জাগছে, বিএনপি কি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায়, না কি তার চিকিৎসার নামে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়? বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিলে সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি, বিদেশ যেতে না দিলে সরকার পতনের আন্দোলন! এসবের কারণ কি? বিএনপি এমন কোনো ইস্যু নেই যা নিয়ে সরকারের পতন চায়নি। এবার তারা ইস্যু বানিয়েছে তাদের নেত্রীর অসুখকে। যা দুরভিসন্ধিমূলক অন্যায় অবদার। বিএনপি তার অতীতের অপকর্ম ঢাকতে বিশেষে করে জিয়া-খালেদা-তারেকের অতীতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি, শেখ হাসিনার প্রতি ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীদের উপর যে অন্যায় অত্যাচার, অমানবিক, নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তা থেকে যদি শিক্ষা নেয় সেটাই তাদের জন্য মঙ্গল। শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে খালেদার অতীতের কুকর্মের কথা মনে না রেখে তার পূর্বসূরীর প্রতি যে মানবিকতা দেখিয়েছে বা এখনো দেখিয়ে চলছেন সেটুকু বিএনপি বা বেগম জিয়ারা দেখাননি। বরং একুশে আগস্টের মত গ্রেনেড হামলা করে তারেক-খালেদা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে চিরতরে শেষ করতে চেয়েছিল। সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে তাৎক্ষণিক তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা দেয়া থেকে বঞ্চিত করেছিল খালেদা জিয়ার সরকার। যে কারণে বিনা চিকিৎসায় তাদের চলে যেতে হয়। আজ সেসব ভুলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সব সুবিধা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে বিএনপি। আর হাসি পাচ্ছে রব ও মান্নার কাণ্ড-কারখানা দেখে।
সামরিক শাসক জিয়ার সঙ্গে আঁতাত করে কর্নেল তাহের ও রবের সঙ্গে একই মামলায় বেকসুর খালাস নিয়ে- পরে জিয়ার কাছ থেকে কিছু রিকশা ঘুষ নিয়ে এখন তার প্রতিদান দিচ্ছে বিএনপির চামচ্চামি করে। আর আ স ম রব শুধু সামরিক শাসক এরশাদের পদলেহনই না, জিয়ার অবৈধ অনুকম্পার কথাও বেলজ্জার মত দেশবাসীর কাছে বলে বেড়াচ্ছে! যা শুধু দুঃখজনকই না অত্যন্ত লজ্জাকর!
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ