রংপুরের তাজুলের মৃত্যু: গ্রামবাসীকে হয়রানি না করার নির্দেশ
২৪ নভেম্বর ২০২১ ২১:১৭
ঢাকা: রংপুরের হারাগাছে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের পর এলাকাবাসীর থানা ঘেরাও, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয়দের হয়রানি না করতে রংপুর মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত এ বিষয়ের শুনানি আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন। এ সময়ের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। অন্যদিকে, শুনানি করেন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, কমিটির প্রতিবেদন ও তথ্য ইতোপূর্বে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে ভিসেরা রিপোর্ট দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়। আদালত এক সপ্তাহ শুনানি মুলতবি করে আগামী বুধবার (১ ডিসেম্বর) পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যপক্ষের আইনজীবী স্থানীয় জনগণকে হয়রানির অভিযোগ করেন।
তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ঘটনা সূত্রে হারাগাছ এলাকার কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে রংপুর মহানগর পুলিশ জানিয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় জনগণকে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
রংপুরের হারাগাছ থানার পৌর এলাকায় গত ১ নভেম্বর তাজুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় ২ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। পরে এ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তথ্য জেনে ৩ নভেম্বর আদালতকে জানানোর জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্তর প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির গঠনের কথা আদালতকে জানান অমিত দাশ গুপ্ত। আদালত তখন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দাখিলের নির্দেশ দেন।
ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিনে (২৪ নভেম্বর) পুলিশের রিপোর্ট পেয়ে আদালত তাজুল ইসলামের মৃত্যুর ভিসেরা রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তাজুলের পরিবার এবং স্থানীয় জনগণকে হয়রানি না করতে রংপুর মহানগর পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেন।
গত ১ নভেম্বর তাজুল ইসলামকে (৫৫) আটকের পর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হারাগাছ থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। সেসময় ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
নিহত তাজুল হারাগাছ পৌর এলাকার দালাল হাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, হারাগাছ থানা পুলিশ ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হারাগাছ পৌর এলাকার নতুন বাজার বছি বানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায়। সেখানে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করে পুলিশ। পুলিশের মারধরে তিনি জ্ঞান হারান। পুলিশ তাকে ধাক্কা দিলে পাশে দেয়ালে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে ভাংচুর চালায় এলাকাবাসী।
তবে হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকারের দাবি, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন এমন খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে গিয়েছিল। আটকের পর তাকে হাতকড়া পরানো হয়। কিন্তু কাপড় নষ্ট করে ফেলায় পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে তাজুল মারা গেছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম