সরকার ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী
২৪ নভেম্বর ২০২১ ২২:১২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেয়নি। সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে আনা ১৪৭ বিধির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই ব-দ্বীপটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে যারা বাস করে তারা যেন সুন্দর জীবন পায়; আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়; তাদের যেন আর কষ্ট করতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার পথেও অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামনে আরও এগুতে হবে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশটাকে গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশকে সাজাবেন, যেন প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুবিধা পায়। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশের উন্নয়নে তিনি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে শুরু করেন। একটি প্রদেশ থেকে দেশে উন্নীত করার যত আইন, নিয়ম নীতিমালা সবই তিনি করে দিয়ে যান।’
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম, কখন আমাদের পিতা ঘরে আসবেন। কিন্তু আমরা বাবাকে পাই পরে। জনগণ পায় আগে। তার কাছে জনগণই ছিল সব থেকে বড়।’
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেশ চালাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোন কাজ করতে যাই দেখতে পাই প্রতিটি কাজের ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এত অল্প সময়ে কীভাবে এত কাজ করে যেতে পারেন। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন কিছু লোক মনে হয় একটি অস্থিরতায় ভুগছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় নানা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চক্রান্ত মোকাবিলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। দেশ যেন নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারে। কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয় তার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেন। বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেন তার জন্য তিনি আর পাঁচটি বছর সময় পেলে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াত। আজকে যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যাক তা যারা চায়নি, তারা এটা সহ্য করতে পারেনি। তারা নানাধরনের অপপ্রচার করেও যখন জনগণের সহায়তা পেল না তখন পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে বার বার ক্যু, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষের মৃত্যু, সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত। এর ফলাফল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।’
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একুশ বছর পর আমরা জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই। আমরা চেয়েছি দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে। রাস্তাঘাটসহ প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি করতে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বার বার ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে। যার কারণে আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোটি কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। অনেক উন্নত দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিনও দেয় না। টেস্টও করে না। আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় টেস্ট করাচ্ছি, ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছি। ধনি দরিদ্র থেকে শুরু করে ছাত্ররা সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছে। সবাই পাবে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে আমরা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ মনে করেছি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযাগ মনে করি। আমরা দারিদ্রের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনা মহামারি না থাকলে এটাকে আমরা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। করোনার কারণে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। তারপরেও উন্নয়নের চাকা কিন্তু আমাদের থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা এভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার পথেও অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পিতভাবে আমরা সমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছি বলে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম