উপসহকারী প্রকৌশলীর বুকে প্রধান প্রকৌশলীর পা
২৪ নভেম্বর ২০২১ ২৩:০৯
রাজবাড়ী: উপসহকারী প্রকৌশলীর বুকের ওপর পা রেখে এবং তাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে। তিনি ওই উপসহকারী প্রকৌশলীকে গলাকেটে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। এসব অভিযোগে আব্দুল আহাদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পাউবো।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনিকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনার ভিডিও পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বুধবার (২৪ নভেম্বর) পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হকের সই করা এক অফিস আদেশে আব্দুল আহাদকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
অফিস আদেশ বলা হয়েছে, অসদাচরণ ও চাকরি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আব্দুল আহাদকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় বোর্ডের প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়েছে। ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে রাজবাড়ী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মঙ্গলাবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি পাউবোর মৃগী পওর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনিকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ। এ ঘটনায় মারধরের শিকার উপসহকারী প্রকৌশলী রনি মঙ্গলবারই ওই দিনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল আহাদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
অভিযোগে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনি উল্লেখ করেন, ২৩ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ তাকে এবং গোয়ালন্দ পওরের উপসহকারী প্রকেীশলী ইকবাল সরদারকে ঢাকায় বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে গিয়ে রাজবাড়ী দফতরের কিছু প্রাক্কলন ও নোটশিটের কাজ করে আনতে বলেন। এসময় রনি জানতে চান, তারা কীভাবে সেখানে যাবেন? তখন আব্দুল আহাদ দফতরের একটি গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। তারা চালককে গাড়ি বের করতে বললে চালক জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর নিষেধাজ্ঞার কারণে গাড়ি বের করা যাবে না। এসময় তারা প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের প্রাক্কলন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে ফোন করে প্রধান প্রকৌশলী আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, স্যার দফতরে নেই।
পরদিন প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে মিটিং থাকায় সেখানে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। উপসহকারী প্রকৌশলী রনি ও ইকবাল সরদার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে ওই দিন বাসে যাওয়ার পরিবর্তে পরদিন নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে গাড়িতে প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সহকারী প্রকৌশলী ফোন দিয়ে ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রনি তা ব্যাখ্যা করেন। এরপর সহকারী প্রকৌশলী তাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের সময় রনি নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার অফিস কক্ষে যান। সেখানে গেলেই নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ তার সঙ্গে তুই-তোকারি করেন এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে গলাকেটে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ সারাবাংলাকে বলেন, রাজবাড়ীতে এই মৌসুমে অনেক নদীভাঙন হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমি অনেক চাপে রয়েছি। সারাদিনই নদীভাঙন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমার অধীন কাউকে কোনো কাজ দিলে তারা কাজগুলো সময়মতো করে না। তাদের আমি একটি জায়গায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেখানে যায়নি। আমি তাদের বারবার বলেছি, কিন্তু তারা আমার নির্দেশ শোনেনি। দেখেন, আমিও তো মানুষ, আমারও তো ধৈর্যের সীমা আছে। আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর কথা স্বীকার করে নিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, আমি অন্যায় করেছি— এটি স্বীকার করছি। কিন্তু তারা যে কাজগুলো করেছে, সেগুলোও ঠিক করেনি। তারা সিসিটিভি ফুটেজের আগে-পরের দৃশ্যগুলো কেটে তাদের মতো করে সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করেছে। আমি এখন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে গেছি।
সারাবাংলা/টিআর
উপসহকারী প্রকৌশলী নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো রাজবাড়ী শ্বাসরোধে হত্যা