Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫০ বছরে কারিতাস: আনন্দ আয়োজনের পর্দা উঠল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৪৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনীর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘কারিতাস বাংলাদেশ’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছরব্যাপী আনন্দ আয়োজনের পর্দা উঠেছে চট্টগ্রাম থেকে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছর পার করা প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়া এবং বৃত্ত থেকে বিন্দুতে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সুধীজনেরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর মোটেল সৈকতের হলরুমে সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দেশ-বিদেশের কারিতাস কর্মী, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন ও বিশপমণ্ডলীর মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগন বক্তব্য দেন কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও। তিনি ৫০ বছরের ধারাবাহিকতায় কারিতাস দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত থেকে কার্যক্রমের ধারা আরও বেগবান করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (কর্মসূচি) এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক জেমস গোমেজ কারিতাসের ৫০ বছরের অর্জনের ইতিহাস ‍তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতেও কারিতাস তার স্বীয় লক্ষ্য নিয়ে মানুষের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতেও কারিতাস মানবতার সেবায় ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপন্ন মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছিল কারিতাস। যেখানেই মানবতার ডাক এসেছে, কারিতাস সেখানেই সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে গেছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জন্য কারিতাসের অনেক কাজ আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশের সুরক্ষায়, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কারিতাসের অনেক ভূমিকা আছে। কারিতাসের কাজ নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। কারণ গবেষণালব্ধ তথ্য যদি সংরক্ষণ করা না যায়, কারিতাসের ভালো অর্জনগুলো হারিয়ে যাবে। পরবর্তীতে মানুষ আর রেফারেন্স হিসেবে কারিতাসের অর্জনগুলোর কথা বলতে পারবে না। আবার কারিতাসের কাজ অনেক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য উদাহরণ হতে পারে।’

দক্ষ ও টেকসই মানবসম্পদ তৈরির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কারিতাস মানুষের জন্য কাজ করে। এক্ষেত্রে তারা কোনো বৈষম্য করে না। দেশ-জাতির বিনির্মাণে কারিতাসের কাজগুলো যেন টেকসই হয় এটা আমার প্রত্যাশা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা। আমরা শিক্ষিত হচ্ছি, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। আর্থিক দৈন্যতা কমছে, কিন্তু মানবিক দৈন্যতা বাড়ছে। আমাদের সন্তানদের ভেতরে মানবিক মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে না। যতই আমরা উন্নতি করি না কেন, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে না পারলে সেই উন্নয়ন টিকবে না। কারিতাসকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম তৈরির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি।’

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও কারিতাসের কর্মীদের বৃত্ত থেকে বিন্দুতে পরিণত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কারিতাস সমাজের জন্য কাজ করে। সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বিন্দু অর্থাৎ পরিবারের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারে যাতে নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক গড়ে ওঠে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারিতাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার সময়গুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। মহান মুক্তিযুদ্ধ যদি না হত, কারিতাসের কর্মকাণ্ড এত ব্যাপকতা পেত না। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ বিনির্মাণে কারিতাস বিনিয়োগ করেছে, এর সুফল ৫০ বছরে এসে পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে। কারিতাস এই উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে যে- আমরা ভাই, আমরা বোন। ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন গোষ্ঠী, ভিন্ন শ্রেণি-আমরা সবাই এক, একসঙ্গে পথ চলি। ভালোবাসার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কারিতাসের সেবা চলতে থাকুক।’

কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী বলেন, ’৫০ বছরে এসে আমরা আজ পেছন ফিরে তাকাচ্ছি, কাজের মূল্যায়ন করছি এবং সামনের দিনের পরিকল্পনা করছি। কারিতাসের অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করতে হবে যে, একটা ভালো প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলেও সেটা কীভাবে নিজস্ব আঙ্গিকে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালনা করা যায়। কারিতাসকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে আনতে হবে। অবশ্যই কারিতাস ৫০ বছর ধরে দয়ার ওপর টিকে আছে। কিন্তু এখন স্বাবলম্বী করার কথা এজন্য আসছে যে, ভালো কাজগুলো কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘কারিতাসের সেবা হচ্ছে ভালোবাসাপূর্ণ। ভালোবাসা দিয়েই কারিতাস সেবা দেয়। প্রকৃতিগত, কৃষ্টিগত পরিবর্তনের কারণে মানুষ অনেক বেশি শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ছে। মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে হবে। কারিতাসকে মানুষকে শৃঙ্খলমুক্ত করার কাজ করতে হবে।’

কারিতাস-এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও বলেন, ‘এ এক গৌরবময় মুহূর্ত, আনন্দের ও উদযাপনের ক্ষণ। আমাদের এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের প্রতি সাড়া দেওয়ার সময় এসেছে। সামাজিক দুর্যোগের প্রতিও সাড়া দেওয়া দরকার।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি ক্রুজ, আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, ভারতের আগরতলার বিশপ লুমেন মন্তেরো, কারিতাসের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) যোয়াকিম গমেজ, আঞ্চলিক পরিচালক সুক্লেশ জর্জ কস্তা।

এছাড়া কারিতাসের ৫০ বছরের পূর্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন- সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, বেবী রাণী দে, নোমান উল্লা বাহার, পিটার বাড়ৈ।

এর আগে, সকালে সুবর্ণজয়ন্তীর শোভাযাত্রা নেগরীর পাথরঘাটায় অবস্থিত সেন্ট প্লাসিডস্ হাইস্কুল মাঠ থেকে বের হয়ে স্টেশন রোডে মোটেল সৈকত প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফেস্টুনসহ বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উন্মুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ, ফটো গ্যালারি উন্মোচন, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীও হয় সেখানে।

সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চট্টগ্রামের লোকজ নৃত্য, ক্ষুদ্র বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য এবং সঙ্গীত পরিবেশন হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

৫০ বছর পূর্তি কারিতাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর