ঢাকা: শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত পারিবারিক আদালতেই নির্ধারিত হবে। হেবিয়াস করপাস (জোর করে হেফাজতে রাখা কাউকে আদালতে প্রদর্শন) রিট মামলায় শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ধারণের সুযোগ নেই। সম্প্রতি হাইকোর্টের দেওয়া এক রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই সংক্রান্ত এক রায় দেন। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি এক শিশুসন্তানকে হেফাজতে রাখা নিয়ে তার মায়ের করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্ট এই রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মোতাহার হোসেন সাজু। অপরপক্ষে ছিলেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রংপুরের এক মেয়ে ও রাজশাহীর এক ছেলের ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে হয়। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। ছয় বছর বয়সী শিশুটিকে ফিরে পেতে তার মা হাইকোর্টে রিট (হেবিয়াস করপাস) করেন। হাইকোর্ট ১২ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন। পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ রিটটি নিষ্পত্তি করে ৭ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
এর আগে ঢাকার পারিবারিক আদালতে শিশুটির অভিভাকত্ব ও হেফাজতে রাখা নিয়ে ২০২০ সালে মামলা করেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, হেবিয়ার্স করপাস রিট মোকদ্দমায় শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ধারণের সুযোগ নেই। পারিবারিক আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে এ বিষয়ে আদালতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ে আরও বলা হয়, উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগের অন্য বেঞ্চে পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ, মনোমালিন্য, দাম্পত্য কলহসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের হেফাজত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হেবিয়াস করপাস মামলা পরিচালনা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। আদালত এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যে, পারিবারিক আদালতসমূহে শিশুদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে মামলাসমূহ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান।
আদালতের নজরে এসেছে যে, ২০১০ সাল, ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের দাখিলকৃত মামলাসমূহ এখনো বিচারাধীন। শিশুদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে মামলাগুলো এতো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা হতাশাজনক এবং ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। এ সকল মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
এমতাবস্থায় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৯ অনুযায়ী দেশের সকল পারিবারিক আদালতসমূহকে শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাসমূহ যাতে মামলা দায়েরের ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
আদালত আরও পর্যবেক্ষণ করেছে যে, পারিবারিক আদালতসমূহের বিভিন্ন আদেশ বিশেষত শিশু সন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষ মান্য করছেন না। ফলশ্রুতিতে তারা হাইকোর্ট বিভাগে এসে হেবিয়াস করপাস অধিক্ষেত্রে আশ্রয় গ্রহণ করছেন।
পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর ধারা-১৯ অনুযায়ী পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করা হলে অবমাননাকারীকে মাত্র দুইশত টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় পারিবারিক আদালত অবমাননায় শান্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়।
আদালত প্রত্যাশা করে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।