পাকিস্তানিরা উন্নয়নে আমাদের ধারে কাছেও নেই: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:০৬
ঢাকা: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক বলেছেন, স্বাধীনতার মাসে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার মতো একটি দিবস পেয়েছি। এটি আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন, স্বাধীনতা পেয়ে কী পেলেন? আজকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়? পাকিস্তান আমাদের ধারে কাছে নেই। তারা শেষ। তারা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। আর আমাদের রাষ্ট্র উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে বলে বুঝতে পেরেছি পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়?’
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০২১ উদযাপন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘পাকিস্তানের কথা আর মুখেও আনবেন না। আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে বলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘এ বস্ত্রখাতের অবস্থা আগে কী ছিল? আমরা ছোটখাটো দোকান করতাম। আমার বাবা প্রায় চট্টগ্রাম যেতেন করাচি থেকে আসা জাহাজের পণ্য কিনতে। আমাদের দেশে কোনো ধরনের কাপড় তৈরি হতো না। সবকিছু সেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসত। তখন বাংলাদেশ থেকে এক ডলারও এক্সপোর্ট হতো না। স্বাধীন হয়েছে বলে এই শিল্প এগিয়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, যারা বস্ত্রশিল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন। আজকে পোশাক শিল্প হয়েছে বলে অন্যান্য শিল্প চালু হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রথমে দিকে তাঁত ছিল, ট্রেক্সটাইল মিলস ছিল না। বস্ত্রখাত আগেই বেড়েছে, আস্তে আস্তে টেক্সটাইল মিলস গড়ে উঠেছে। একসময় আমরা সুতা আমদানি করতাম। এখন সুতাও তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে। আস্তে আস্তে সব শিল্প আমাদের দেশে গড়ে ওঠছে। সুতরাং বস্ত্রখাত আগে বাড়লে, কতগুলো খাতের উন্নয়নও বাড়ে। যখন একটা কারাখানা গড়ে ওঠে তখন হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা দিয়েছেন পোশাক শিল্পকে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এত টাকা দিয়ে দেওয়া হলো ওদেরকে। তারপর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য শিল্পদেরকেও দেখেছেন। প্রত্যেক শিল্পকে প্রধানমন্ত্রী কোনো না কোনো সহযোগিতা করেছেন। আজকে পোশাক শিল্প প্রণোদনা পেয়ে চালু ছিল বলে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজকে প্রত্যেকেটা গার্মেন্টস অর্ডার দিয়ে কূল করতে পারছেন না। অর্ডারের পর অর্ডার আসছে। এটির মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, ‘সেই সময় যদি প্রধানমন্ত্রী আপনাদের প্রণোদনা না দিত তাহলে আপনারা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী সেই সময় উপলব্ধি করতে পেরেছেন দুর্দিনে শিল্পকারখানাকে বাঁচিয়ে না রাখি তাহলে আমার দেশ গড়ে ওঠবে না। একেই বলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার মতো দেশকে ভালোবেসে এই কাজগুলো করে যাচ্ছ। শিল্প দিয়ে রেভিনিউ আসছে। যত শিল্প গড়ে ওঠবে তত রেভিনিউ আসবে। উন্নয়ন করতে হলে শিল্পক্ষেত্রে রেভিনিউ আনতে হবে। আগে দেখেন প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু তৈরি করতে চেয়ে বিশ্ব ব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকার জানায়। তখন তিনি নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরি করেছেন। কত বড় সাহস লাগে!’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার মসলিন হাউস তৈরি করেছি। জামদানি ও মসলিন এই দুইজন বোন। ১৭০ বছর আগে মসলিন হারিয়ে যায়। এটি কেউ উদ্ধার করেননি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে আমরা আবারও মসলিন পোশাক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।’
এদিন পোশাক শিল্পে ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ৭ প্রতিষ্ঠানকে সম্মননা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক, এমপি।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ এর সভাপতি ফারুক হাসান, বিটিএমইএ এর সভাপতি আলী খোকন, বিকেএমইএ এর হাতেম আলী, বিজিবিএ সভাপতি ইফতেখার হোসাইন, বিএসটিএমপিআইএ সভাপতি আজিজুল হকসহ আরও অনেকেই।
পুরস্কার পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ), বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস্ অ্যান্ড পাওয়ার লুম ইন্ডাস্টিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএসটিএমপিআইএ), বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতি।
সারাবাংলা/এআই/একে