ইউক্রেনের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। সেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করছে। ক্রেমলিনের আদেশে যেকোনো সময় হামলা চালাতে প্রস্তুত তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগগুলোর প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে রাশিয়া আচমকা ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া হামলা করলে ওই অঞ্চলে ন্যাটোও জবাব দিতে পারে। ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে কয়েকটি বিশ্বশক্তি।
গতে কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন রুশ ভূখণ্ডে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে আসছে ক্রেমলিন। সাম্প্রতিক সৈন্য সমাবেশের তথ্য ওই শক্তিবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার খবর। এই ইস্যুতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সম্প্রতি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সীমান্তে পৌনে ২ লাখ রুশ সেনার তথ্য দিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, আগামী বছরের শুরুতে ইউক্রেন দখল করে নিতে স্থল-জল ও আকাশপথে সাঁড়াশি অভিযানের পরিকল্পনা করছে মস্কো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গত বসন্তে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রুশ সামরিক মহড়ার সময় আমরা যা দেখেছি, এবার তার দ্বিগুণ শক্তি বৃদ্ধি করেছে মস্কো। আগামী বছরের শুরুতে তারা ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে।
তিনি জানান, ক্রেমলিনের পরিকল্পনায় রয়েছে ১০০টি কৌশলগত সামরিক ব্যাটালিয়ন দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হামলা চালানো। এসব ব্যাটালিয়নে অনুমানিক ১ লাখ ৭৫ হাজার সেনা রয়েছে। রয়েছে ভারী অস্ত্র যেমন কামান, ট্যাংক, অত্যাধুনিক বন্দুক ইত্যাদি।
গোয়েন্দা নথির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নথিতে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি রয়েছে। এতে দেখা গেছে, রুশ সেনারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে ৫০টি কৌশলগত যুদ্ধদল মোতায়েন করা হয়েছে। নতুন আরও বহু ট্যাংক ও কামান নেওয়া হয়েছে।
কয়েকদিন আগে থেকেই অবশ্য ইউক্রেন তাদের সীমান্তে অন্তত ৯০ হাজার রুশ সেনা সমাবেশের কথা জানিয়ে আসছে। মস্কো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সীমান্তে কিয়েভই সেনা জমায়েত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মঙ্গলবার ইউক্রেন ইস্যুতে ভ্লাদিমির পুতিন ও জো বাইডেনের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা রয়েছে। এ বৈঠকের আগে ওয়াশিংটনকে চাপে রাখতে চায় মস্কো। ইউক্রেন যাতে ন্যাটোতে যোগ না দেয় এবং দেশটিতে মার্কিন সেনা তৎপরতা যাতে বন্ধ করা হয়, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত চায় মস্কো। ওয়াশিংটনকে এসব দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতেই ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক তৎপরতার মাত্রা বাড়াচ্ছে ক্রেমলিন।
এদিকে, সম্প্রতি পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। তাই সেখানে ওই নিরাপত্তা জোটের কার্যক্রম সীমিত করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা চাইবে রাশিয়া।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভারভ জানালেন, শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে ন্যাটো। রোমানিয়া ও পোল্যান্ড সীমান্তে সামরিক স্থাপনা গড়তে গড়তে ন্যাটো এখন রাশিয়ার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। সেখানে অ্যান্টি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বসানো হয়েছে, যেন অঞ্চলটিকে আক্রমণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অচিরেই মার্কিন মধ্যমপাল্লার মিসাইলে ইউরোপ ছেয়ে যাবে। আর সমগ্র অঞ্চলে সামরিক সংঘাতের সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে আসবে।