ঢাকা: রাজারবাগ দরবারের পির দিল্লুর রহমানসহ ও চক্রের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ও সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট আমলে নিতে পারবেন তদন্তকারী সংস্থা। একইসঙ্গে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে রাজারবাগ দরবার শরীফের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়া মামলার তদন্তের স্বার্থে সিআইডি, কাউন্টার টেররিজম ও দুদক চাইলে রাজারবাগ দরবার শরীফের পিরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত দুটি রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। দুদকের পক্ষে ছিলেন জাহিদ হোসেন দোলন।
এর আগে, গত ২ ডিসেম্বর পির দিল্লুর রহমানসহ চার জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিটে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে আইনজীবী এমাদুল হক বশির আবেদনটি দায়ের করেন।
ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলার বিষয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। হাইকোর্টে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃঞ্চ নাথ।
সিআইডির দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে এসব ভুয়া মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পির দিল্লুর রহমানের নাম উঠে আসে।
প্রতিবেদন দাখিলের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির নেপথ্যে পিরের কারসাজির তথ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এর আগে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ‘অস্তিত্বহীন’ বাদীর করা ৪৯ মামলার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
আইনজীবী এমাদুল হক বশির সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে অর্ধ শতাধিক মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি ১ হাজার ৪৬৫ দিন জেল খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সব ভুয়া মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পিরের দিল্লুর রহমানসহ ৪০ জনের বেশি লোকের সম্পৃক্ততা সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে। আর এসব মামলা দায়েরের মূল হোতা হচ্ছেন পিরে দিল্লুর রহমানসহ চার জন। আমরা জানতে পেরেছি তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
এ ছাড়া রাজারবাগ পির ও তার চক্র দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ৭ বছরের শিশু, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদরাসার শিক্ষক, ব্যাবসায়ীসহ আট জন ভুক্তভোগীর পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন আইনজীবী শিশির মনির। পির ও তার চক্র রিটকারীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও মানহানীকর মামলা দায়েরের অভিযোগ আনেন।
আজ দুটি রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রাজারবাগ পিরের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা দায়ের করতে পারবে বলে আদেশ দেন।