Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সারাবাংলার ছড়িয়ে পড়ার ৪, ৫-এ লক্ষ্য দুর্বার

কবীর আলমগীর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর
৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:০১

আমরা যারা নিউজ মেকিং, এডিটিং কিংবা প্রোডাকশনের সঙ্গে জড়িত- বলা হয়, তাদের জগত সীমাবদ্ধ। কথাটি সত্য। আমাদের জগত সীমাবদ্ধ এই কারণে যে, এক জন ডেস্ককর্মীর সম্বল একটি কম্পিউটার আর কয়েক বর্গফুটের নিউজ টেবিল। এখানেই শুরু আমাদের খবরের জগৎ।

আমাদের রুটিনও ধরাবাঁধা— বাসা থেকে অফিস, অফিস থেকে বাসা। আমরা নিউজ রুমে বসে কাজ করি বলে রিপোর্টারের মতো সর্ববিচরণকারী হওয়া কখনই সম্ভব নয়। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টা থাকে সর্বোচ্চ বস্তুনিষ্ঠ তথ্যটি যেন পাঠক পায়।

বিজ্ঞাপন

বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেওয়ার চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। হাতে যখন কোনো নিউজ আসে, ‘বার্ডস আই ভিউ’ দিয়ে সেটি একবার পড়ে নিই। এরপর কোনো তথ্য লাগলে প্রয়োজনে ফোন দিতে হয় রিপোর্টারকে। কনফার্ম হই, রি-কনফার্ম হই। নিউজ আগে দেওয়ার তাড়া আমাদের ওই অর্থে নেই, তবে সবার আগে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে নিউজ প্রকাশের তাগিদ আছে।

যদি রিপোর্টার অন্য কোনো নিউজের পেছনে ব্যস্ত থাকেন তাহলে আপাতত তথ্য সরবরাহের কাজটি ডেস্ক থেকেই করা হয় যতটুকু সম্ভব। তাই বলে মনগড়া কোনো তথ্য দেব? তথ্য ইনপুট করার স্বাধীনতা আছে বলে ইচ্ছেমতো তথ্য দেব? কিংবা রিপোর্টারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ফেলে দেব? কখনই না। একদমই না।

আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করি, তথ্য নিশ্চিত করি। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে নানা জায়গায় যোগাযোগ করি। এরপর বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যে ‘আমাদের বিবেচনায়’ যে তথ্য বস্তুনিষ্ঠ আমরা কেবল সেটি প্রকাশ করি। তাই সারাবাংলা ডটনেটে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বস্তুনিষ্ঠ, বিশ্বাসযোগ্য। সারাবাংলার সংবাদ শতভাগ সত্য।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এই দিনে সারাবাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। একদম প্রথম দিককার নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে আমি একজন। আনুষ্ঠানিকভাবে সারাবাংলার যাত্রা শুরুর আগেও আমাদের প্রস্তুতি ছিল বেশ কয়েকমাসের।

বিজ্ঞাপন

পল্টনে বীর প্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী সড়কে অবস্থিত জামান টাওয়ারের ১৫তলায় ছিল আমাদের অফিস। মনে আছে, অস্থায়ী একটি অফিস থেকে নিয়োগপত্র হাতে নিয়েছিলাম। এরপর অফিস শুরু করি। যদিও অফিসের অবকাঠামো তখনও তৈরি হয়নি। কেবল নিউজ রুমে ফলস ছাদ বসেছে, টেবিলগুলো পা খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। তখনও মিস্ত্রিদের হাতুড়ির শব্দ, করাতের ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ আওয়াজ, কাঠের বুকে একটার পর একটা পেরেক ঠোকার আওয়াজ। কাঠের ধুলো ওড়াওড়ি, তারপিন আর রঙের গন্ধ— এই ছিল আমাদের নিউজরুম।

আমরা আশাবাদী হতাম। আশাবাদী এই ভেবে যে, অঙ্কুরে গজিয়ে ওঠা একটি স্বপ্নের চারা ধীরে ধীরে বৃক্ষে পরিণত হবে। আগেভাগেই নিয়োগ পেয়েছিলাম বলেই আমরা বিশাল এই কর্মযজ্ঞের সাক্ষী হতে পেরেছি।

বিভিন্ন মিডিয়া থেকে আসা এক ঝাঁক কর্মী ছিল আমাদের। আমরা আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকি একে অপরের সঙ্গে। অফিসিয়াল পরিচয়ের বাইরেও একেকজনের সঙ্গে তৈরি হয়েছিল আত্মার বন্ধন। হাঁটি হাটি পা পা করে সারাবাংলা চার বছর পেরিয়ে এখন পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। আজ সারাবাংলার জন্মদিন। আমরা কৌশলী শিশুর মতো সাবধানে পা ফেলে পাড়ি দিচ্ছি বন্ধুর পথ। আমরা দুরন্ত শিশুর মতো এলোমেলো দৌড়াতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছি না। আমাদের লক্ষ্য শৃঙ্খলভাবে দৌড়ানোর। হাজারও গণমাধ্যমের ভিড়ে আমরা শৃঙ্খলভাবে প্রথম আসনটি নিতে চাই দখলে।

আমরা শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী, আমরা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী। এই পাঁচ বছরে পা দিয়ে আমরা বিনা দ্বিধায় এই কথা বলতে পারি যে, আমরা আমাদের অস্তিত্ব জানান দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য স্থির, গন্তব্য পরিষ্কার। আমরা সত্যটি তুলে ধরতে চাই, পাঠকের মাঝে আসল খবর দিতে চাই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেপরোয়া আধিপত্যের এই সময়ে আমরা প্রায়শই গুলিয়ে ফেলি কোনটা সঠিক তথ্য, কোনটা নিউজ কিংবা কোনটা নিউজ নয়। তাই অনেক সময় আমরা ভুল করেও ফেলি। আবার সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রিনে ভেসে ওঠা কোনো তথ্য হয়ে ওঠে কারও কারও কাছে নিউজ সোর্স। কিন্তু আমরা স্রোতে গা ভাসাচ্ছি না। ডিজিটাল এই বাস্তবতায় সোশ্যাল মিডিয়াকে আমরা অস্বীকার করতে পারছি না সত্য। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো তথ্য আমাদের বিশ্বাসযোগ্য সোর্স নয়; সেটি প্রাথমিক সোর্স হতে পারে। কিন্তু সেটি বস্তুনিষ্ঠ মাধ্যম নয়। সে বিষয়ে আমরা সচেতন।

সাংবাদিকতা পেশায় আছি বলে অনেকে আমাদের কাছে নানা তথ্য জানতে চান। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিঙ্ক দিয়ে জানতে চান ঘটনাটি কি সত্য? রামপুরায় বিক্ষুব্ধ জনতা কয়টি বাসে আগুন দিয়েছে? যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সংখ্যা আসে ২০-৩০টি, যখন অন্যান্য মিডিয়ার কেউ কেউ লেখেন ৯টি বা ১৫টি বাসে আগুন। আমরাই তখন সঠিক তথ্য জানাতে পারি— বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়েছে ৮টি বাসে। এ রকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

নিউজ এডিট করার সময় আমরা সম্পাদকীয় পলিসি মাথায় রাখি, মাথায় রাখি নানা আইন-কানুন, মাথায় রাখি সংবাদ প্রকাশের নানা নীতিমালা-বিধিমালাও। ফলে কোনো নিউজ দিয়ে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। কোনো তথ্য আসা মানেই নিউজ ডেস্ক থেকে প্রকাশের তাড়াহুড়ো নেই। আমাদের লক্ষ্য ফ্যাক্ট চেক, তথ্য যাচাই, সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য নিউজ প্রকাশের নামে সামাজিক অস্থিরতা কিংবা উসকানি তৈরি নয়।

আগেই বলেছি, আমাদের স্বপ্নের চারাটি এখন ধীরে ধীরে বৃক্ষে পরিণত হচ্ছে। সুতরাং বৃক্ষের গায়ে ঝড় আসবে, ঝাপটা আসবে, পাতা ছিঁড়বে, শাখা ভাঙবে— এটিই বাস্তবতা। এরকম ইতি-নেতি অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে কিঞ্চিত। এরপরও আমরা ইতিবাচক চিন্তা করতে শিখেছি। আমাদের বৃক্ষটি শেকড় গাঁথতে চায় গভীরে। সুতরাং আমরা সাংবাদিকতার মূল জায়গাতেই থাকতে চাই।

প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সহকর্মী এখন আর সারাবাংলায় নেই। কেউ কেউ অন্য হাউজে গেছেন, কেউ কেউ থিতু হয়েছেন অন্য চাকরিতে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে স্মরণ করছি তাদের অবদানকেও। স্বপ্নের চারাগাছটি বেড়ে উঠতে সবাই করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম।

সারাবাংলার স্বত্বাধিকারী গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), আমাদের অভিভাবক ও প্রকাশক বদরুল আলম খান, গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা, সানিয়া বিনতে মাহতাব ও গাজী গোলাম আশরিয়ার প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা। তাদের স্বপ্নের উর্বর জমিতে সারাবাংলা ফলাতে চায় শ্রেষ্ঠ ফসল। আমরা কেবল সেই উর্বর ভূমির কৃষক।

সারাবাংলার একজন দক্ষ কৃষকের নাম এ এস এম রফিক উল্লাহ রোমেল ভাই। তার সার্বক্ষণিক গাইডলাইনে আমাদের কৃষক জীবন হয়ে উঠছে ফুলে-ফলে আর সবুজের প্রান্তর। একটা কচি চারাগাছকে পরিণত বৃক্ষের দিকে নিয়ে যেতে রোমেল ভাইয়ের প্রয়াস অনবদ্য। নিউজরুম থেকে যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, রোমেল ভাই বাতলে দেন সমাধান। এই দুর্গম সময়ে রোমেল ভাই আমাদের কাছে এক ভরসার নাম, এক প্রেরণার নাম।

এবার আসল কথাটি বলতে চাই— আমাদের নিউজ রুম স্বাধীন। ডেস্ক ম্যান হিসেবে আমরা নিউজ পাবলিশড প্রক্রিয়ায় কোনো দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য শক্তির বশবর্তী নই। এখানে কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এমনকি আমাদের রিপোর্টাররাও স্বাধীন। যেসব উপকরণ মিললে একটি তথ্য সংবাদ হতে পারে তার পুরোটাই আমরা অনুসরণ করি। আমরা শুধু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কাজটি করি বিনা সংকোচে। এটুকু বলতে পারি, কোনো মিডিয়াতে নিউজ হোক বা না হোক, নিউজ মেরিট থাকলে সারাবাংলা সেই নিউজ প্রকাশ করতে কার্পণ্যবোধ করে না। ভবিষ্যতেও করবে না।

চার পেরিয়ে পাঁচ-এ পা রেখেছে সারাবাংলা ডটনেট। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সারাবাংলার কলাকুশলী, বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক— সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

সারাবাংলা/একে/পিটিএম

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর