Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোর বোর্ডের ৭ কোটি টাকা গায়েব, প্রতিবেদনে পার পাচ্ছেন জড়িতরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৪৬

ঢাকা: যশোরে শিক্ষা বোর্ডে ৩৮টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে গঠিত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জালিয়াতিতে জড়িতদের দায়মুক্তি দেওয়ার তথ্য মিলেছে। একমাসেরও বেশি সময় নিয়ে তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, তাতে অসম্পূর্ণতা রয়েছে। পাশাপাশি জালিয়াতির অর্থের গন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে যেন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তাসহ আরেকজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে দায়মুক্তি দেওয়ার পথ খোঁজা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চেক জালিয়াতির ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় গত ৭ অক্টোবর। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানী। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহিন, সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. সালাহ উদ্দিন, বোর্ডের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও বোর্ডের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

এই কমিটি চার দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে সেই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমকে জানতে দেওয়া হয়নি। তবে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়ার পর ওই সময় বোর্ডে নিয়োজিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজাকে শিক্ষা অধিফতরের এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি করা হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশ না পাওয়া তদন্ত কমিটির সেই প্রতিবেদনের একাংশ এসে পৌঁছেছে সারাবাংলার কাছে। তাতেই দেখা গেছে, এই প্রতিবেদন যথার্থ হিসেবে আমলে নিলে জালিয়াতিতে অভিযুক্ত বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়মুক্তি পেয়ে যাবেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের যে অংশটি সারাবাংলার কাছে এসে পৌঁছেছে সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— ৩৮টি চেকের মধ্যে দুইটিতে জালিয়াতি হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ৩৬টি চেক জালিয়াতির সবগুলোর দায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বোর্ডের বরখাস্ত হিসাব সহকারী কর্মচারী আব্দুস সালাম (পলাতক) এবং তার সঙ্গে ৩৪টি চেক জালিয়াতির ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শেখ আশরাফুল ইসলাম বাবুকে জড়িত দেখানো হয়েছে। তবে একজন কর্মচারী আর একজন বহিরাগত সরবরাহকারী কীভাবে বছরের পর বছর ৩৬টি চেকে বোর্ডের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে, তার সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা তদন্ত প্রতিবেদনে নেই।

বিজ্ঞাপন

তদন্তে নাম উঠে আসা আশরাফুল ইসলাম বাবু অবশ্য কেবল ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং নয়, আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠান নিজের বলে দাবি করেছেন। মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের নামে সব চেক জালিয়াতি হলেও মেসার্স শাহীলাল স্টোর ছাড়া সবগুলোতে আশরাফুল ইসলাম বাবুর জড়িত থাকার বিষয়েও মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়— এ সব জালিয়াতির মদতদাতা বা সুবিধাভোগীদেরও চিহ্নিত করা হয়নি এতে। ১০টি জেলার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কীভাবে মাত্র দুজন ব্যক্তি এভাবে এত বড় দুর্নীতি করেছেন, সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।

শিক্ষা সচিব এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। কিন্তু এই তদন্ত কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে জালিয়াতির অনেক তথ্যই স্পষ্ট করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর শিক্ষা বোর্ড ১০ জেলার উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত করে, প্রশ্নপত্র তৈরি করে, খাতা দেখে, রেজাল্ট দেয়। প্রতিটি প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে হয়। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মচারী ও একজন বহিরাগত যদি এভাবে নানা ধরনের জালিয়াতি করে থাকেন, তাহলে বোর্ডের সব কর্মকাণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের এই জালিয়াতির তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়লে শুরুতেই বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি ছিল, আব্দুস সালাম ও মো. আশরাফুল ইসলাম বাবুকে আইনি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এবং জড়িত সবাইকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। তদন্ত কমিটি একেবারে শেষে এসে সেই সত্যটি স্বীকার করে নিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যালোচনাতেও দেখা গেছে, সালাম ও বাবু বোর্ডের চেক, অ্যাকাউন্টের টাকা ও কমিটির সঙ্গে একের পর এক ‘গেম’ খেলেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— প্রথম দফায় জিজ্ঞাসার সময় সালাম ও আশরাফুলকে তারা সামনাসামনি পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তাদের সাক্ষাৎ না পেলে মোবাইল ফোনে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে সালাম একাধিকবার সময় ও সিম নম্বর পরিবর্তন করেছেন, কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অজ্ঞাত থেকেছেন। একপর্যায়ে এ-ও জানিয়েছেন, আদালতে তিনি নিজেকে প্রকৃত দোষী হিসেবে স্বীকার করে নেবেন, জড়িতদের নামও প্রকাশ করবেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— আশরাফুল ইসলাম বাবু নামে-বেনামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন তদন্ত কমিটির কাছে। বলেছেন, সব টাকা আব্দুস সালাম নিয়েছেন। সরল বিশ্বাসে তিনি এসব কাজ করেছেন। এত টাকা সালাম কেন নেন— তদন্ত কমিটির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি সালামকে বিশ্বাস করতেন।

এ বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বোর্ডের এই চেক জালিয়াতিতে মূলত আব্দুস সালাম ও মো. আশরাফুল ইসলাম দায়ী। কয়েকটি চেক জালিয়াতিতে নূর এন্টারপ্রাইজের গাজী নূর ইসলামও সহযোগী ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদনে চেক জালিয়াতির তথ্য

তদন্ত কমিটির যে প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— যশোর শিক্ষা বোর্ডে প্রথম দফায় ৯টি, পরে একটি, এরপর ১৬টি এবং সবশেষ ১২টিসহ মোট ৩৮টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এই চেকগুলো দুই ধরনের- কিছু চেক ভ্যাট আয়করের এবং কিছু চেক প্রতিষ্ঠানের নামে। এই চেকগুলো ঘষামাজা করে টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। সালাম তদন্ত কমিটির কাছে ঘষামাজার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে চেকে স্বাক্ষরকারী চেয়ারম্যান ও সচিব স্বীকার করেছেন, চেকের তিনটি অংশের টাকার পরিমাণ একই দেখেই তারা সই করেছেন। এক্ষেত্রেও আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, তিনি ব্যাংকের অংশে টাকা পরিবর্তন করে নিয়েই চেক সই করিয়েছেন। প্রেস ব্যবসায়ী শেখ আশরাফুল ইসলাম বাবুও টেম্পারিংয়ের কথা অস্বীকার করেছেন। কমিটি অবশ্য সালামের যুক্তির সঙ্গে কিছু কারণে একমত হতে পারেনি। কমিটির মতে চেকগুলিতে টেম্পারিং করা হয়েছে।

তদন্ত রিপোর্টে ৩৬টি চেক ১০টি প্রতিষ্ঠানের নামে গেছে বলে জানানো হয়েছে। এর ১৮টি চেকে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬ হাজার ৪৫২ টাকা শেখ শরিফুল ইসলাম বাবুর মালিকানাধীন ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সানিয়া ইলেকট্রনিক্স, শরিফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেস ও মিম প্রিন্টিং প্রেসের নামে। এর মধ্যে কেবল ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামেই ১১টি চেকে ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৭ টাকা লেখা হয়েছে। বাবু জানিয়েছেন, তিনি রাজারহাটে দেশ প্রিন্টার্সেও পরিচালক হিসেবে ওই অফিসে বসেন। স্থানীয় প্রেস ব্যবসায়ী ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে দেশ প্রিন্টার্সের লোক বলেই জানেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে— প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের নামে সাতটি চেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭ টাকা লোপাট হয়েছে।

তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, সেটিও বাবুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ফলে বাবু একাই ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৯ টাকা জালিয়াতির মাধমে নিয়েছেন। তবে বাবুর দাবি, সব টাকাই নিয়েছেন সালাম।

এদিকে নূর এন্টার প্রাইজের নামে বোর্ডের আটটি চেকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৮ টাকা জমা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক গাজী নূর ইসলাম এর পেছনে বাবুকে দায়ী করেছেন। তবে বাবুকে তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেছেন। তদন্ত কমিটির মন্তব্য, এই আটটি চেকের টাকা যোগ করলে ৬ কোটিরও বেশি টাকা লোপাটের সঙ্গে জড়িত বাবু।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে— সবুজ প্রিন্টিং পেসের নামে প্রায় পৌনে ১২ লাখ টাকার একটি চেক জালিয়াতি হয়েছে। ওই প্রেসের মালিক অসীত খাঁ মারা গেছেন। বোর্ডে দাখিল করা দরপত্রে প্রোপ্রাইটরের নাম ‘আশরাফুল’ লেখা। এদিকে, মিম প্রিন্টিং প্রেস ২০-২৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে, মালিকও মারা গেছেন। নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে যে দরপত্র দাখিল করা হয়েছিল, তাতে আবুল কাশেমের সই দেওয়া হয়েছে। অথচ আবুল কাশেম ১৭/১৮ বছর আগে মারা গেছেন। এরকম কিছু ঘটনা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির নামের প্রতিষ্ঠানে এখনো কীভাবে কাগজ হালনাগাদ হচ্ছে, তা তদন্ত কমিটির কাছে বোধগম্য হয়নি।

কমিটি প্রতিবেদনে একাধিকবার দাবি করেছে— ব্যাংকে গ্রাহক সুরক্ষা আইনের কারণে চাইলেই তথ্য পাওয়া যায়নি। কার নামে কোন কাগজের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট চলছে, তা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে। উল্লেখ করার মতো বিষয়, যে ১০ প্রতিষ্ঠানের নামে এই চেকগুলো জালিয়াত হয়েছে, তার ২৭টিই যশোরের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে জমা হয়েছে। এর বাইরে অগ্রণী ব্যাংকে মিম প্রিন্টিং প্রেসের নামে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৫ টাকার যে চেক জমা হয়েছে, সে বিষয়ে ওই প্রেসের মালিক বলেছেন, গত ১৫ বছর তিনি বোর্ডের কোনো কাজ করেননি বা অগ্রণী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্ট নেই।

তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে শেখ শরিফুল ইসলাম বাবু সম্পর্কে আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে, বোর্ডের কেউ না হয়েও বোর্ডের সব ট্যুর ও বার্ষিক কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি। চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনের সান্নিধ্যে থাকতেন। করোনাকালে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন যখনই কোনো কর্মসূচিতে যেতেন, বাবু ও কামাল তার সফরসঙ্গী থাকতেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষা বোর্ডের ২০২১ সালের যে ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয়েছে সেখানে বোর্ড চেয়ারম্যানের ধান কাটার ছবিতে শেখ শরিফুল ইসলাম বাবু ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন রয়েছেন।

বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাবুর এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে বোর্ডের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই মুখফুটে বলেছেন, চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ মদতেই সব সংগঠিত হয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাবুসহ জড়িত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিল দেওয়ার বিষয়ে কিংবা তাদের টেন্ডার বা কাজ দেওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন তাদের পীড়াপীড়ি করতেন, চাপ দিতেন, টেন্ডারের শর্ত শিথিলও করতে বলতেন। এত কিছুর পরও তদন্ত প্রতিবেদনে চেয়ারম্যনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের দায় খুঁজে না পাওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা আরও বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য ও সুপারিশ উঠে এসেছে সেগুলো প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করার মতো যথেষ্ট নয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বোর্ডের পক্ষে হারানো টাকা উদ্ধার সম্ভব হবে না।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের এই জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জানতে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে যা কিছু বলার, সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে অবহিত করতে বলে উল্লেখ করেন তারা। তবে তদন্ত করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে কথা হয় মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই হয়ে গেলে প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনে কোন বিষয়গুলো উঠে এসেছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে সারাবাংলা যেসব বিষয় জানতে পেরেছে, তা নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আবুল খায়ের বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু বলার সময় এখনো আসেনি। আমরা যথাসময়ে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করব। ব্যবস্থা নিলে আপনারা জানতে পারবেন।

এর আগে, গত ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডে ভ্যাট আয়করের ৯টি চেকে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। পরে আরও একটি চেকসহ মোট ১০টি চেকে ২ কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার ২০ টাকা তুলে নেওয়ার কথা জানা যায়। এ ঘটনায় বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ওই ১০টি চেক জমা হওয়া ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শেখ আশরাফুল ইসললাম বাবু, মেসার্স শাহীলালা স্টোরের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে আরও ২৮টি চেকেও জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত হয়। এ গুলোও আগের মামলার তদন্তে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে দুদক যশোর অফিস।

সারাবাংলা/টিআর

চেক জালিয়ালি টাকা লোপাট শিক্ষা বোর্ড

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

ঢামেকে অভিযানে ২১ দালাল আটক
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর