‘এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে’
৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫৫
ঢাকা: আশির দশকজুড়ে ক্ষমতায় থাকা সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই দেশে গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের বলতে হচ্ছে— স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর হতে পারে না। এখন রাস্তায় নেমেই কেউ স্লোগান দিতে পারে না— স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের মানুষ কতটা গণতন্ত্র ভোগ করছে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর থেকেই স্বৈরাচারের উত্থান আর গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয় মিলনায়তনে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের সাবেক কনসালট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ জাপা চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন, ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আবার ১৯৯০ সালে সংবিধান সমুন্নত রেখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবিধানিক নিয়ম নীতি মেনেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু এখন দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, একটি দলের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হন তিনি। আবার সরকারপ্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তাই সরকারপ্রধান যা বলেন, তার বাইরে কিছুই হতে পারে না। এতে আইনসভাও সরকারপ্রধানের অধীনে, বিচার বিভাগও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে শতকরা ৯৫ ভাগই সরকারপ্রধানের অধীনে। তাই রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি বিভাগ একই ব্যক্তির অধীনে থাকায় এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাকে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বলা যায়।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার। তাই সঠিকভাবে নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ কারণেই জাতীয় পার্টি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। জনগণের কাছে সরকারের সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতাই হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা। কিছু মানুষ অন্যায়ভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। কিন্তু কেন স্বৈরাচার বলেন, তার উত্তর দিতে পারেন না।
এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। বলেন, সরকারি দলের সদস্য না হলে কেউ চাকরিও পায় না, কেউ ব্যবসাও করতে পারে না। সরকারি দলের হলে এক ধরনের আইন, বিরোধীদের জন্য আলাদা আইন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধে মূল চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলময় রাজনীতির পতন শুরু হয়েছে। আর উত্থান হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের। এর বিপরীতে এরশাদের রাজনীতি গণমানুষের জন্য কল্যাণকর রাজনীতি ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছেন। যতদিন বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন কেউ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক হয়ে অপচেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় না থেকেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। আবার মাত্র ১৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও অত্যন্ত সুসংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে আছে। কারণ জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন ও জহিরুল ইসলাম জহির; জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের ও জহিরুল আলম রুবেল; ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওমর, এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু ও জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
এছাড়া যুব সংহতির আহ্বায়ক এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, মহিলা পার্টির সদস্য সচিব হেনা খান পন্নি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, শ্রমিক পার্টির সভাপতি এ কে এম আশরাফুজ্জামান খান, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. ইব্রাহিম খান জুয়েলসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর