অকালবৃষ্টিতে যশোরে জলমগ্ন ১৯ হাজার হেক্টর জমির সবজি-রবি ফসল
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৩৫
যশোর: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ৪৮ ঘণ্টার টানা বর্ষণে সবজির ভাণ্ডারখ্যাত যশোরের সবজিসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই দিনের ভারি বর্ষণে জমিতে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে শীতকালীন সবজি, ডাল, শরিষা, গম, বীজতলাসহ রবি মৌসুমের নানা ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত মোট জমির পরিমাণ ১৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেবল সবজি। এতে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সাগরে নিঃশেষ হলেও এর প্রভাবে রোববার (৫ ডিসেম্বর) থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। মঙ্গলবার দুপুর (৭ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঝরেছে সেই বৃষ্টি। যশোরের আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়েই জেলায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ১৯০ মিলিমিটার।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, অসময়ে এই রেকর্ড পরিমাণ টানা বর্ষণে শীতকালীন সবজি শিম, মূলা, ফুলকপি, আলুসহ নানা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির সবজি, ৪ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমির মসুরের ডাল, ৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমির সরিষা, ২৫৬ জমির হেক্টর আলু, ২৬ হেক্টর জমির গম ও ২৫৩ হেক্টর জমির বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির সবজি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বৃষ্টিতে।
কৃষকরা বলছেন, টানা বৃষ্টির ফলে তাদের অনেকের জমির সবজি ও ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ফসল ও সবজির বেশিরভাগই ক্ষেতে নষ্ট হবে। অন্যদিকে নতুন যেসব সবজি লাগানো হয়েছিল, সেগুলো থেকেও কোনো ফলন আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে কৃষকদের, বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণটিই বেশি হবে।
স্থানীয় একজন কৃষক জানালেন, তিনি এক বিঘা জমিতে ফুলকপি ও এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছিলেন। দুই বিঘা জমির সব সবজিই পানির নিচে। প্রায় দুই দিন পানির নিচে থাকায় এসব জমি থেকে কোনো ফলন পাবেন না বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি।
আরেক কৃষক বলেন, আমার আবাদের জমিতেও পানি জমে আছে। এখন মেশিন দিয়ে পানি সেঁচে বের করার চেষ্টা করছি। যা ফসল আছে, হয়তো বাঁচবে না। তারপরও চেষ্টা করছি, পানি বের করে দিয়েও যদি কিছুটা ফসল বাঁচানো যায় সেই আশায় আছি।
আরেক কৃষক জানালেন, লাউসহ শীতকালীন বেশকিছু সবজিই তিনি আবাদ করেছিলেন। এখন সব জমিতেই পানি জমে আছে। এর ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে, সেটি এখনই বলতে পারছেন না। তবে আবাদের খরচও তুলতে পারবেন না— এমনটিই আশঙ্কা তার।
জানতে চাইলে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর জেলার ১২ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন ফসলের আবাদ হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন বা অন্যান্য যেসব সবজির বেশিরভাগই এখন মাঠ থেকে তুলে বাজারজাত করার পর্যায়ে ছিল। এখন লঘুচাপের প্রভাবে দুই দিন ধরে যে টানা বৃষ্টিপাত, তাতে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির সবজি জলমগ্ন হয়েছে। এতে সব ধরনের আবাদেই ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।
তিনি আরও বলেন, যেসব ক্ষেতের সবজি বা ফসল চারা অবস্থায় ছিল, সেগুলোতেও পানি ও কাঁদা জমে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে এসব জমিতে নতুন করে চারা রোপণ করতে হবে। তাতে সবজির ফলনে ১০ থেকে ১২ দিন দেরি হয়ে যাবে। সবজির ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় ক্ষতি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া সবজি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে দামও অনেক বেড়ে গেছে। তাতে কৃষকের আপাত কিছু লাভ মনে হলেও চূড়ান্তভাবে তাদের ক্ষতির পরিমাণটিই বেশি হবে। আর ক্রেতাদের তো বাড়তি দাম দিতে হচ্ছেই।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, কৃষি বিভাগ দুয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বিষয়েও আমরা ভাবছি। সরকার তো কৃষকদের নানাভাবেই প্রণোদনা দিচ্ছে। আশা করব, আগামীতে যে প্রণোদনা থাকবে, তাতে এই অকালবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারি সহায়তায় তারা বীজ ও সার পেলেও কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
সারাবাংলা/টিআর