Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জিয়ার বাতিল করা ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আমরা আদায় করেছি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২০

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান ট্রেড ইউনিয়ন বাতিল করেছিল। ১৯৮৪ সালে ট্রেড ইউনিয়ন করবার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে এরশাদ সরকারের এক ডায়ালগে অংশ নিয়েছিলাম। এবং সেই অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২০ ও মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেলসহ নবনির্মিত ৮টি স্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল জিয়াউর রহমান। এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ। ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি একটা ডায়ালগের ডাক দিয়েছিল। আমরা বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম আলোচনা করতে। কিন্তু আলোচনা শুরুর আগে আমার দুটি শর্ত ছিল। একটি শর্ত হচ্ছে, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, আমাদের ১৪ ছাত্রনেতাকে জিয়াউর রহমান ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল; তাদের সেই আদেশ বাতিল করতে হবে। সেই ডায়ালগ করার সময় এই ট্রেড ইউনিয়ন করবার অধিকারটা আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। এটা অবশ্য অনেকের জানার কথা নয়। অনেকে হয়তো ভুলেই গেছে। কিন্তু আমি আজকের দিনে এটা স্মরণ করছি।’

শ্রমিক-মালিকদের সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব এখন প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে যদি উৎপাদন-রফতানি সঠিকভাবে চালাতে হয় তাহলে কারখানাগুলো যাতে যথাযথভাবে চলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে রফতানি বন্ধ হবে, কর্ম পরিস্থিতি থাকবে না, নিজেরাও কাজ হারাবেন। এবং তখন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরতে হবে। সে কথাটা মনে রেখে শ্রমিকদের কিন্তু দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অধিকার আদায়ের জন্যই সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন। এই বাংলাদেশের মানুষ শোষিত-বঞ্চিত। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীনতার সংগ্রামের আন্দোলন করেন এবং সেই পথ বেয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে।’ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তোলার বিভিন্ন দিক ও উদ্যোগ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় একটা অনুরোধই করব আমাদের মালিক-শ্রমিকদের। তাদের মধ্যে একটা সুন্দর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। কারণ মালিকদের মনে রাখতে হবে যে, এই শ্রমিকদের শ্রম দিয়েই কিন্তু তাদের কারখানা চালু রাখে এবং অর্থ উপার্জনের পথ করে দেয়। আবার সেইসঙ্গে শ্রমিকদেরও মনে রাখতে হবে, কারখানা আছে বলেই কিন্তু তারা কাজ করে খেতে পারছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে পারছেন। কারখানা যদি ঠিকমতো না চলে তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে। কাজেই যে কারখানা আপনার রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, সেই কারখানার প্রতি যত্মবান হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মালিকদের দেখতে হবে শ্রমিকদের অসুবিধা কী বা তাদের জীবন-জীবিকা যাতে সুন্দরভাবে চলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমের ন্যায্য মূল্যটা তারা যেন পায় এবং শ্রমের পরিবেশ যাতে সুন্দর থাকে, সেটাও তাদের দেখতে হবে। আবার শ্রমিকদেরও দায়িত্ব কারখানাটা সুন্দরভাবে চালানো, যাতে উৎপাাদন বাড়ে। আমরা চাই মালিক এবং কর্মজীবী-শ্রমজীবীদের কল্যাণ ও সমন্বয়ে দেশ এগিয়ে যাক। আমরা শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও শিল্প উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। ২০০৯ সালে আমরা সরকারে গঠন করে ৪২টি শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দিই। তাছাড়া দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি (স্কেল ভিত্তিক) ৪ হাজার ১৫০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছি। তৈরি পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি (স্কেল ভিত্তিক) ১ হাজার ৬৬২ টাকা হতে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন এবং সেখান থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৮৫ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, শুধুমাত্র শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল হতে ৭ হাজার ৯০৫ জন শ্রমিক ও ৯টি বন্ধ প্রতিষ্ঠানকে ১০৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় শ্রম নীতি-২০১২, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা-২০১৩ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।

করোনা মহামারির সময়েও দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে পারার সক্ষমতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে প্রেরণা সৃষ্টি করবে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই এভাবে কাজ করে যাচ্ছি মানুষের কল্যাণে। করোনার সময় নগদ অর্থের সহায়তা দিয়েছি সমগ্র বাংলাদেশে। তাছাড়া খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি অথবা ভর্তুকি মূল্যেও আমরা খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। এভাবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন-জীবিকাকে অব্যাহত রাখার জন্য যা যা করণীয় আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করে যাচ্ছে। আমরা শিল্পায়নের উপর জোর দিয়েছি। এই শিল্পায়ন শুধু রাজধানী বা কয়েকটা জায়গায় নয়, সারাদেশেই আমরা বিশেষ শিল্পায়ন গড়ে তুলছি। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তুলেছিলেন। আমরা এখন তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি।’

এক্ষেত্রে কৃষি জমি রক্ষা করে শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে উঠেছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। আমি চাই, সমগ্র দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ুক। আমরা কিন্তু করোনাকালে পিছিয়ে থাকিনি, এগিয়ে গেছি। কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে শ্রমিক-কৃষক-শিল্প মালিক সবার অবদান রয়েছে। দেশের সব শ্রেণির মানুষের অবদান রয়েছে।’ এজন্য সবাইকে ধন্যাবদ জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে; সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাতে আমরা অনেক সুবিধা পাব। হয়তো প্রথম দিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেগুলি মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত। বাংলাদেশের মানুষের আর কোনো কষ্ট থাকবে না। গ্রামীণ অর্থনীতি যাতে আরও শক্তিশালী হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

পরে প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ বন্দরে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র, চট্টগ্রামে ছয় তলা বিশিষ্ট শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তন ভবন, নারায়ণগঞ্জে পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট আঞ্চলিক শ্রম দফতর, বগুড়ায় তিন তলা ভবন বিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র ও আঞ্চলিক শ্রম দফতর, গাইবান্ধায় তিন তলা ভবন বিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, বাগেরহাটের মোংলায় তিন তলা বিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র, খুলনার রূপসায় চার তলা ভবন বিশিষ্ট শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র এবং রাঙ্গামাটির ঘাগড়ায় শ্রম কল্যাণ কমপ্লেক্সের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

টপ নিউজ ট্রেড ইউনিয়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর