আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না: প্রধানমন্ত্রী
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৩৬
ঢাকা: খেলাধুলা-শরীরচর্চা খুবই প্রয়োজন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনোদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না, পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি আর বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। আজকের এই শিশুরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের সুনাম বয়ে আনবে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বালক (অনুর্ধ্ব-১৭) ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বালিকা (অনুর্ধ্ব-১৭)-২০২১-এর জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনে আরও ২০ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই খেলার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের প্রমিলা ফুটবল এবং বালক ফুটবল; এই দুই ফুটবল’ই ভালো উৎকর্ষতা হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই তারা খেলাধুলায় এগিয়ে আসছে। আমি আশা করি যে, ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নত খেলা আন্তর্জাতিকমণ্ডলে নিয়ে যেতে পারব। তাই ছোটবেলা থেকেই আমরা তাদের সেভাবে তৈরি করে দিচ্ছি।’
নিজের পরিবারের সদস্যদের সবসময় খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা খেলাধুলায় দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তিনি একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছেন। তখনও তিনি খেলাধুলাকে ভোলেননি। তার সময়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ফিফার সদস্যপদ পায়। যেটা খুব অসাধ্য সাধন করার বিষয় ছিল।’
‘অর্থাৎ শিশুকাল থেকেই সকলকে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করা, এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। ১৯৭৫’ র পরে একুশটা বছর পার হয়ে যায়, বাংলাদেশ খেলাধুলা বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সেভাবে এগুতে পারেনি। ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন আমরা এসে খেলাধুলার ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেই’- বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় খেলাধুলার প্রতি যত্ন নেয় এবং আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘খেলাধুলা চর্চা যেন আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভালোভাবে হয়, সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। তা ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত আমি এই নির্দেশ দিয়েছি প্রতিটি জায়গায় যেন আমাদের বাচ্চাদের খেলাধুলার একটা সুযোগ থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় অনেক ক্রীড়াসেবী অসুস্থ হন, অসচ্ছল হন; তাদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি সেখানে ১০ কোটি টাকা সিড মানি দিয়েছি। সেখানে আরও ২০ কোটি টাকা সিড মানি দেব। যেন এই টাকা অসুস্থ ও অস্বচ্ছল ক্রীড়াসেবীদের কাজে লাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা আমরা চাই যে যারা আজকে ফুটবল খেলছে, মেয়েরা-ছেলেরা আমি আলাদাভাবে কাউকে দেখি না। সবাইকে আমি বলব, তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে খেলাধুলা করবে। মনে রাখতে হবে, ধীরে ধীরে তোমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেয়ে প্রতিযোগিতা করতে হবে। সেই সময় বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেটাই আমি আশা করি এবং সেভাবেই আমরা তোমাদেরকে তৈরি করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলেমেয়ের যত খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে সম্পৃক্ত রাখতে পারলে তারা কখনও বিপথে যাবে না। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে মাদকাসক্ত ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত হবে না। তারা খেলাধুলা করবে, পড়াশোনা করবে, মানুষের মতো মানুষ হবে সেটি আমরা চাই।’
খেলাধুলা, শরীরচর্চা এটি খুবই প্রয়োজন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা কোনো দিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না, পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি আর বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে আমরা চলব। আর আমাদের আজকের এই শিশু; এরাই তো আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দেশের সুনাম বয়ে আনবে।’
এ ছাড়া বাংলাদেশের ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের সহযোগিতা করার জন্য ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো.জাহিদ আহসান রাসেল, যুব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
সারাবাংলা/এনআর/একে