মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: কাদের
১২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৪০
ঢাকা: মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে ব্রিফিংকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের সময় ১৯৭৪ সালে কিউবার কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্যবাহী জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল আমেরিকা।
তিনি বলেন, একাত্তরের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে আছে। তবুও বন্ধুত্বের প্রশ্নে স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেইনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপাক্ষিক ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে।
র্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। এ বাহিনীর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাত জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল। কোনো অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে। আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে।
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য এবং নিপীড়ন প্রশ্নে খোদ জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তোলেন, মেক্সিকো-ইউএসএ সীমান্তে কতজন মারা গেছে? যেখানে বন্দুক হামলায় প্রতি বছর লাখো মানুষ মারা যায়, নির্বাচনে হেরে যে দেশের ক্যাপিটাল হিল দখল করতে গিয়ে পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা বিশ্ববাসী লক্ষ্য করেছে।
অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচক সমূহে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খোদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর কোনো কোনো খুনি এখনও আমেরিকায় লুকিয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধীরাও সেদেশে পালিয়ে আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর অব লেবার রবার্ট রেইচ এক টুইট বার্তায় বিশ্বকে জানিয়েছিলেন শুধু ২০২০ সালে সেদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে ৯৮৪টি।
২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬ হাজার ৬০০ জন। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ বিনা বিচারে মারা যায়- যা বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক আস্থা এবং বিশ্বাস উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ আশা করে দুই দেশের জনগণের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকতর তথ্য নির্ভর এবং যত্নবান থাকবে।
যে কোনো ইস্যু এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে সুরাহার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একপেশে কোনো সিদ্ধান্ত বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশের প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ নয়। ইতোমধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ তার ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/এএম