Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজয় দিবসে সমৃদ্ধির শপথ— শহিদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫১

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ মুজিববর্ষের মহান বিজয় দিবসে দাঁড়িয়ে জাতিকে শপথ পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথে তার সঙ্গে দেশের কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগের পাশাপাশি জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় জানিয়েছে বাঙালি জাতি।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মহান বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের আয়োজনে উপস্থিত হয়ে এই শপথবাক্য পাঠ করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথবাক্য পাঠ করানোর সময় এসময় তার পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

শপথে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহিদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। দেশকে ভালোবাসব। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাজারও জনতা। একই সময়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আট বিভাগীয় শহরে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে শপথ নেন লাখো বাংলাদেশি।

শপথবাক্য পাঠ করানোর আগে দক্ষিণ প্লাজায় উপস্থিত হয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতেই বিজয় দিবসের এই ক্ষণে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ৩০ লাখ মানুষ এবং নির্যাতনের শিকার ২ লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। একইসঙ্গে সশ্রদ্ধ সালাম জানান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

শেখ হাসিনা আরও স্মরণ করেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত জাতির পিতাসহ তার পরিবারের ১৮ সদস্যকে। শ্রদ্ধা জানান পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকদের হাতে নিহত চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানাকে। গণতন্ত্র, ভোটের ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা শহিদ হয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন— তাদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে— এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন।

জাতির পিতার ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পথ ধরে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস বক্তব্যে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর সদর দফতর থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে গোটা দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে গোটা জাতি এক হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়।

দেশবাসীকে শপথপাঠের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করব।’ এসময় তিনি শপথবাক্যে সবাইকে তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর অনুরোধ জানান।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয় দিবসের শপথ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর