‘এমন বাংলাদেশের জন্য শহিদরা আত্মত্যাগ করেনি’
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৪৭
ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বীর শহিদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে তা এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। ৩০ লাখ শহীদের জীবন আর লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে দুটি দল। ১৯৯০ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, দুঃশাসন, দলীয়করণ আর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দেশকে বিচ্যুত করেছে।
ক্ষমতাসীনরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মাঠেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না। জাতীয় পার্টি প্রার্থীদের মারধর করছে, প্রশাসনের সহায়তায় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে চাপ দিচ্ছে। আবার ঠুনকো কারণে বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থীতা বাতিল করছে। এমন বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, এমন বাংলাদেশের জন্য বীর শহিদরা আত্মত্যাগ করেনি, বলেন জি এম কাদের।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) জুরাইন রেলগেটে জাতীয় পার্টি শ্যামপুর ও কদমতলী আয়োজিত বিজয় সমাবেশ ও পতাকা মিছিল উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে জাপা চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জি এম কাদের আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা শোষণ করতো, পূর্ব পাকিস্তানের টাকায় তারা পশ্চিম পাকিস্তান সাজাতো। এখনো আমরা শোষণের শিকার হচ্ছি, হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের ২য় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরিণত করেছিলো তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে। ঠিক তেমনিভাবেই এখনো বৈষম্য চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করেছে। ক্ষমতাসীন দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করতে পারে না। বৈষম্য সৃষ্টি করেছে ধনী ও গরীবের মাঝে। ধনীদের জন্য এক আইন আর গরীবদের জন্য আলাদা আইন। স্বাধীনতার মূল নীতি হচ্ছে শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়া। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে দেশকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
সমাবেশে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতারাই বলেছিলেন জাতীয় পার্টির সমর্থন না পেলে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ টিকতো না। ১৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি হা হুতাশ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অচল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দেশের মানুষ নতুন মুদ্রা চায়, যারা দেশের মানুষকে শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও এখনো জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে শক্তিশালীভাবেই টিকে আছে। কারণ, জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছে। দেশের মানুষ আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের জন্য জাতীয় পার্টি রাজনীতি করে না।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকেই বিশ্বাস করে। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে জাতীয় পার্টি ছাড়া আর কোনো দলই দেশে সুশাসন দিতে পারবে না। তাই দেশের রাজনীতিতে একমাত্র সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে জাতীয় পার্টি আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে, যুগ্ম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শেখ মাশুকুর রহমান, সমরেশ মন্ডল মানিক, এম এ সোবহান, আক্তার হোসেন দেওয়ান, ইব্রাহিম মোল্লা, কাওসার মোল্লা, মামুন মোল্লা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম