Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দুয়ার খুলে দিলো মালয়েশিয়া

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৩১

ঢাকা: নানা সংশয়-অনিশ্চয়তার পর অবশেষে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি দিলো মালয়েশিয়া। প্রায় চার বছর পর দেশটির সঙ্গে কর্মী পাঠানো সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি করেছে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় এ সংক্রান্ত সমঝোতা সই হয় রোববার (১৯ ডিসেম্বর)।

বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এই সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন। এর মাধ্যমে প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলতে যাচ্ছে। মঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরই বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কার্যকর হবে।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিতে মালয়েশিয়ার সরকার দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের অনুমতি দেয়।

গত ১০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারকে সই করার জন্য দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান আনুষ্ঠানিক এক চিঠিতে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রি ইমরান আহমদকে আমন্ত্রণ জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী।

বৃক্ষরোপণ, বাগান, কৃষি, উৎপাদন, পরিষেবা, খনি ও খনন, নির্মাণ এবং গৃহকর্মী নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে জানান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দুই বছর ধরে বিদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ রেখেছিল মালয়েশিয়া। যদিও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ প্রায় চার বছর ধরে। এখন দুদেশের মধ্যে কর্মীসংক্রান্ত এমওইউ স্বাক্ষর হওয়ার পর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় আর কোনো বাধা থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

বেতন হবে সর্বনিম্ন ১২০০ রিঙ্গিত: মালয়েশিয়ায় সর্বনিম্ন মজুরি এক হাজার ২০০ রিঙ্গিত। যার বাংলাদেশের ২৪ হাজার ৪২০ টাকার সমপরিমাণ। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে পারলে, তাদের জন্য মালয়েশিয়ার মজুরি কাঠামো প্রযোজ্য হবে। তাই বেতন এক হাজার ২০০ রিঙ্গিতের কম হবে না।

নানা অভিযোগ তুলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। পরের পাঁচ বছরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান একেবারেই সীমিত ছিল।

বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দেশটিতে ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী যান। বহুল আলোচিত জিটুজি প্লাস চুক্তি সইয়ের পর, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে এক লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয় দেশটিতে। মালয়েশিয়া সরকারের পছন্দ করা বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এই কর্মীদের পাঠায়। এই ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পেয়েছিল।

২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ফেরেন মাহথির মুহাম্মদ। এরপর নাজিব রাজাকের সরকারের আমলে সই হওয়া জিটুজি প্লাসে কর্মী নিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশটির দুয়ার।

দেশে লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ জনশক্তি ব্যবসায় রয়েছে। বাকিদের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হয়েছে। এবারও নির্দিষ্ট সংখ্যক এজেন্সি কর্মী পাঠাবে কিনা- জানতে চাইলে ইমরান আহমদ বলেন, আশা করছি সব এজেন্সিই কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে।

বিজ্ঞাপন

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেও কর্মী নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনা হয়েছিল। তখন মালয়েশিয়ার প্রস্তাব ছিল সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০টি এজেন্সি কর্মী পাঠাবে। বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল কমপক্ষে আড়াই থেকে তিনশ’ এজেন্সিকে যুক্ত করার।

অতীতে বাংলাদেশ থেকে খাতভিত্তিক কর্মী নিয়েছে মালয়েশিয়া। কৃষি ও প্লান্টেশন খাতে কর্মীদের কম মজুরিতে মানবেতর পরিবেশে বেশি কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ সংক্রান্ত প্রমাণও দিয়েছে। ইমরান আহমদ বলেন, ‘এবার মালয়েশিয়ার সব খাতই বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।’

আগে মালয়েশিয়ায় এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ করা হতো। এর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠাত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। ইমরান আহমদ বলেন, ‘আগামীতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোই কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র আনবে। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কর্মীরা যেনো প্রতারিত বা নির্যাতিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার নরজদারি করবে।’

শ্রমবাজারের বাধা ছিল সিন্ডিকেট: সরকারিভাবে (জি-টু-জি পদ্ধতি) কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান (সিন্ডিকেট) দুর্নীতি করায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগ স্থগিত ছিল। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন পর্যায় থেকে অন্তত পাঁচ বার ইতিবাচক ঘোষণাও আসে। কিন্তু কাজ হয়নি। প্রতিবারই ওই সিন্ডিকেটের তৎপরতায় তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে।

এদিকে, ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃস্তান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো ঘটনাও চোখে পড়েনি।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত ওই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো— ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স।

এর আগে, দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে সরকারিভাবে (জি-টু-জি) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ চালু হয়। ওই সময় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দুই দেশের সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশ করে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।

ওই সময় দুই দেশের সমঝোতা অনুযায়ী সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে খরচ হওয়ার কথা ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা। তবে ওই ১০ সিন্ডিকেট প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে চার লাখ টাকা করে নেয়। এতে করে কমবেশি দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ওই সিন্ডিকেট আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়।

সারাবাংলা/জেআর/এসবি/একে

জনশক্তি রফতানি মালয়েশিয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর