ঢাকার বাইরে বুস্টার ডোজ আগামী সপ্তাহে
১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:২৩
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বুস্টার ডোজ প্রয়োগের উদ্বোধন করা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আগামী সপ্তাহ থেকেই দেশের ৬৪টি জেলাতেই এই বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) সরকারের ছয় মন্ত্রীসহ ৬০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয় এক অনুষ্ঠানে। ওই সময় জানানো হয়, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে বুস্টার ডোজ গ্রহণ সম্পর্কিত বিষয়টি হালনাগাদ করে এসএমএসের মাধ্যমে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
পরে রাতে ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সবসময়ই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কয়েকটি দিন পর্যবেক্ষণ করি। এক্ষেত্রে আজ যারা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নিয়েছেন, তাদের আমরা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করব। এর মধ্যে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মটি প্রস্তুত হয়ে গেলে আমরা বুস্টার ডোজ প্রয়োগের জন্য এসএমএস দিতে শুরু করব।
আরও পড়ুন- বুস্টার ডোজে অগ্রাধিকার পাবেন প্রবাসীরা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যারা এরই মধ্যে নিবন্ধন করে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পূর্ণ হলে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এর জন্য আলাদাভাবে কাউকে কোনো নিবন্ধন বা আবেদন করতে হবে না। যেসব কেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং ভ্যাকসিনের সময়সীমা ছয় মাস পেরিয়েছে, তাদের সেসব কেন্দ্র থেকেই তৃতীয় বা বুস্টার ডোজের জন্য এসএমএস দেওয়া হবে। এরপর ওই ব্যক্তি নির্ধারিত ভ্যাকসিন কেন্দ্রে গিয়ে এসএমএস দেখিয়ে বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, এই মুহূর্তে যাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে তাদের অনেকেই ছয় মাস আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন অনুযায়ী তৃতীয় ডোজের জন্য অন্য যেকোনো ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে একই প্রতিষ্ঠানের। মিক্সড ডোজ তথা দুই ডোজে দুই কোম্পানির ভ্যাকসিনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ হিসেবে আপাতত ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন- সুরক্ষা আপডেটের পর এসএমএসের মাধ্যমে শুরু হবে বুস্টার ডোজ
ডা. ফ্লোরা আরও বলেন, এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইজারের ভ্যাকসিন আমাদের হাতে রয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই বেশি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিন বুস্টার ডোজ হিসেবে প্রয়োগে কোনো বাধা নেই। সে কারণেই বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এটি যেন সারাদেশের মানুষ পায়, সেটি নিয়েও কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
দেশের সবখানেই ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশের সব জায়গায় ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা ছিল না। কারণ এর সংরক্ষণ ছিল জটিল। তবে পর্যায়ক্রমে সেই সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলাতেই ফাইজারের ভ্যাকসিন গেছে। বর্তমানে উপজেলা পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কাজ চলছে।
আরও পড়ুন- বুস্টার ডোজে হজযাত্রীদের অগ্রাধিকার দিতে সুপারিশ
বুস্টার ডোজ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বয়স্ক ও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বুস্টার ডোজ প্রয়োগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বলা হয়। এ বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া যারা সংক্রমণের আশঙ্কায় রয়েছেন, বিশেষ করে যাদের জটিলতার শঙ্কা বেশি, মৃত্যুঝুঁকি বেশি, তাদের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। তবে আমাদের নিয়মিত ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলবে। পাশাপাশি আমরা বুস্টার ডোজ দেবো।
সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে বুস্টার ডোজের বিষয়টি যুক্ত না থাকার কারণেই সারাদেশে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম এখনই শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানান ডা. ফ্লোরা। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিবন্ধন ও এর তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যম হলো সুরক্ষা অ্যাপ। কিন্তু বুস্টার ডোজের বিষয়ে সুরক্ষা অ্যাপ এখনো প্রস্তুত নয়। এখনো কাজ চলছে। কাজ ঠিকমতো না হওয়া পর্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে বুস্টার ডোজ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের দ্রুত বুস্টার ডোজ প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সুরক্ষা অ্যাপটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। তখন আমরা সারাদেশে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করতে পারব।
আরও পড়ুন- প্রথম দিনেই বুস্টার ডোজ নিলেন যে ৬ মন্ত্রী
রোববার রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) অডিটোরিয়াম হলে ‘বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রম’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ওই সময় প্রথম বুস্টার ডোজ দেওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে। দেশে প্রথম ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিও ছিলেন তিনি।
নার্স রুনুর পর একে একে করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আরও পড়ুন-
দুপুরে শুরু বুস্টার ডোজের ট্রায়াল
প্রথমদিনে একাধিক মন্ত্রী পাচ্ছেন বুস্টার ডোজ
বুস্টার ডোজ নিয়ে মুখোমুখি পরামর্শক কমিটি ও নাইট্যাগ
প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হবে বুস্টার ডোজ
সুরক্ষা প্লাটফর্মে বুস্টার ডোজের তথ্য মিলবে ২৮ ডিসেম্বরের পরে
সবার আগে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজও নিলেন রুনু ভেরোনিকা কস্তা
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা করোনা ভ্যাকসিন ডা. ফ্লোরা বুস্টার ডোজ