ঢাকা: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাচনে পরিচালক পদে লড়ছেন তরুণ উদ্যোক্তা বন্ডস্টাইন টেকনোলজি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মীর শাহরুখ ইসলাম। নির্বাচিত হলে তিনি বেসিসের বিভিন্ন সেবায় ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করতে চান। এতে করে বেসিসের সদস্য কোম্পানিগুলো কোন সেবা নিলে সেবায় ওই প্রতিষ্ঠানটি সন্তুষ্ট কি না, তা জানাতে পারবে।
বাংলাদেশকে বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তি খাতের একটি বিশ্বস্ত গন্তব্যে পরিণত করাও লক্ষ্য মীর শাহরুখের। সারাবাংলার সঙ্গে কথোপকথনে তরুণ উদ্যোক্তা জানিয়েছেন বেসিসকে নিয়ে তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা।
সিনার্জি স্কোয়াড থেকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মীর শাহরুখ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমি বেসিস নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমার কাছে মনে হয় বেসিসকে যদি ফিউচারিশটিক ভিশন-ভিত্তিক ট্রেড বডিতে পরিণত করতে হয়, তাহলে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির (আইওটি, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট) ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। সেই জায়গাটির ওপর ভিত্তি করেই আমার নির্বাচনে আসা।’
তিনি বলেন, আমি দু’টি বিষয়ে ফোকাস করতে চাই। প্রথমত, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অর্থাৎ আইওটি, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো প্রযুক্তি নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করতে চাই। এসব প্রযুক্তির জন্য আমাদের ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা অপরিহার্য। আমাদের বৈশ্বিক মানে পৌঁছাতে হবে যেন আমরা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তি খাতের একটি বিশ্বস্ত গন্তব্যে পরিণত হতে পারি। সেই জায়গায় আমাদের সবাইকে এই বিষয়গুলো বুঝে কাজ করতে হবে। সুতরাং ইন্ড্রাস্ট্রিতে যাদের ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নিয়ে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের আসাটা এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন- বেসিস নির্বাচনে তারুণ্যের হাতছানি
মীর শাহরুখের মনোযোগের দ্বিতীয় বিষয়টি হলো সদস্যদের জন্য সেবা। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সদস্য সেবার যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেখানে আমরা সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার বিষয়টি চালু করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের সদস্যরা বেসিস থেকে যে সেবাই নেবেন, সেই সেবার মান নিয়ে পর্যবেক্ষণ জানাতে পারবেন। এটি জানতে পারলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে, কোন সেবাটির মান উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ সদস্যদের জন্য সেবাপ্রাপ্তি আরও মানসম্মত ও সহজ করাই হবে আমার লক্ষ্য, যার মাধ্যমে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত রেখে একটি সাংগঠনিক কাঠামো আমরা গড়তে পারি।
তরুণ এই প্রার্থী আরও বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখানোয় বিশ্বাস করি। ১০ বছর আগে ব্যবসা শুরুর সময়েও স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমাদের দেশে অনেকগুলো টেক কোম্পানি থাকবে, আমরাও পৃথিবীর বড় বড় জায়ান্ট টেক ডেসটিনেশনের মতো মার্কেট লিড করব। সেই স্বপ্ন আজ অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে। সেই স্বপ্নকে পুরোপুরিভাবে পূরণ করতে আমার মনে হয় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর সেখানেই আমার কাজ করার এবং অবদান রাখার জায়গা আছে বলে মনে করি। আমার প্রত্যাশা, বেসিসের সকল সদস্য আমাকে সমর্থন করবেন।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের অবদান তুলে ধরে শাহরুখ বলেন, আমার কোম্পানি বন্ডস্টাইন দেশের আইওটি মার্কেট লিড দিচ্ছে। ১৯ বছর বয়সে যখন ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম, তখন থেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু। ১০ বছর ধরে এ খাতে ব্যবসা করছি। গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের উদ্ভাবন করা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করবার মতো একটি জাতীয় সংকটের সমাধান করা হচ্ছে। এ বছর প্রায় ১৩টি পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়নে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি পরীক্ষা, গুচ্ছভিত্তিক সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এবং মেডিকেল পরীক্ষাতেও ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের প্রযুক্তি। আমরা কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে বাংলাদেশের প্রথম আইওটি ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছি। আমাদের ক্লায়েন্ট হিসেবে হিসেবে পেয়েছি অজিয়াটা, টেলিনর, গুগলের মতো লিডিং ব্র্যান্ডদের। আমরা মূলতই আইওটি হার্ডওয়্যার এবং আইটি ক্লাউড নিয়ে কাজ করছি।
নিজের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরে শাহরুখ বলেন, আমি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছি। এরপর ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সিড ট্রান্সফরমেশন নিয়ে পড়ালেখা করি। সেখানে আমার মূল বিষয় ছিল কীভাবে মাঝারি আকারের ব্যবসাকে স্ট্রাকচার করে স্কেলআপ করতে হয়। এছাড়াও আমি ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম, গ্লোবাল শেপার ঢাকা হাবের কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এসব অভিজ্ঞতার কারণেই প্রযুক্তিভিত্তিক খাতটির উন্নয়নে নির্বাচনে আসা। আশা করি বেসিস সদস্যরা আমার পূর্ণ প্যানেলের পক্ষে রায় দেবেন।
বেসিস নির্বাহী পরিষদ ২০২২-২০২৩-এর নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর, গুলশানে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ৮৭৬ জন। এর মধ্যে সাধারণ ভোটার ৬৫৪ জন, অ্যাসোসিয়েট ১৮২ জন, অ্যাফিলিয়েট ৩৭ জন ও আন্তর্জাতিক ভোটার তিন জন। নির্বাচনে সাধারণ সদস্যপদে লড়ছেন ২৪ জন, অ্যাসোসিয়েট পদে দুই জন, অ্যাফিলিয়েট পদে দুই জন এবং আন্তর্জাতিক পদে একজন। আন্তর্জাতিক পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সৈয়দ এম কামাল বিনা প্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৮ জন।