৪ দেশে ৪টি বেসিস ডেস্ক করতে চাই: রাশাদ কবির
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:২৬
ঢাকা: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাচনে পরিচালক পদে লড়ছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাশাদ কবির। ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি। বেসিসের পরিচালকও ছিলেন। এবার নির্বাচনে লড়ছেন সিনার্জি স্কোয়ডের হয়ে।
নির্বাচিত হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারটি বেসিস ডেস্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য রাশাদ কবিরের। সফটওয়্যার খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে রফতানি আয়ে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করাও তার লক্ষ্য। বিদেশি ডোনার ফান্ডের দরপত্রে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যেও কাজ করছেন তিনি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী একটি পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরি করতে চান তিনি।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে বেসিস নির্বাচন নিয়ে এমন সব পরিকল্পনার কথা জানালেন রাশাদ কবির। সাধারণ ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এই তরুণ প্রার্থী বলেন, গত দুই বছরে আমার কাজ ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে বেসিস কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করা। এ জন্য আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জাপানে বেসিস জাপান ডেস্ক করেছি। দেশের ট্রেড বডির ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক। আমাদের অনেকগুলো কোম্পানি এখন জাপান থেকে ভালো অর্ডার পাচ্ছে। আর সেটি সম্ভব হচ্ছে জাপান ডেস্কের কারণে। আমাদের এখন আরও চারটি ডেস্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে— যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আরব আমিরাত ও আফ্রিাকাতে। এই ডেস্কগুলোর কাজ হবে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোতে তুলে ধরা, সেই দেশগুলোর বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা।
তিনি বলেন, এতদিন ধরে আমাদের কোম্পানিগুলো নিজেরাই নিজেদের মার্কেটিং করত বা এজেন্সিগুলো দিয়ে কাজ নিয়ে আসত। কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, আমরা বড় পরিসরে কাজ নিয়ে আসতে চাইলে ফরমাল ওয়েতে অ্যাপ্রোচের বিকল্প নাই। এটি না করতে পারলে বড় ভলিউমের কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই আমাদের এই ডেস্কগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা করা।
আরও পড়ুন- বেসিস নির্বাচনে তারুণ্যের হাতছানি
রাশাদ কবির বলেন, আরকটি কাজ কিন্তু আমরা গত কয়েক বছর ধরে করেছি। সরকার আইসিটি পণ্য রফতানির আয়ে প্রণোদনা দিচ্ছে। এই প্রণোদনা কিন্তু আমরা বেসিস সদস্যদের জন্য নিয়ে এসেছি। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২৮৫টি কোম্পানি ৩১৬ কোটি টাকার প্রণোদনা পেয়েছে। এটি আমাদের বোর্ডের খুবই বড় অর্জন। তারপরও এখানে আমাদের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা সফটওয়্যারের ব্যবসা করে, তারা কিন্তু এখনো ক্যাশ ইনসেনটিভের আওয়াতায় নেই। আবার ফ্রিল্যান্সার মার্কেটে কর্মরতরাও প্রণোদনা পাচ্ছে না। নির্বাচিত হলে এই দুদু’ জায়াগায় কাজ করব।
রাশাদ বলেন, দেশের বাজারেও আমাদের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়াতে কাজ করব। এজন্য দেশীয় বাজারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের আওয়্যার্ড অনুষ্ঠান করে আসছি। দেশের কোম্পানিগুলো যে বহির্বিশ্বে কাজ করছে, বড় বড় সফটওয়্যার রফতানি করছে, এসব কারণে দেশীয় বাজারে কোম্পানিগুলোর প্রচারণা বেড়েছে। অনেকের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকারি কাজে বেসিস সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে আমরা এটি করতে পেরেছি। সরকারি দরপত্রে এখন উল্লেখ থাকে যে বেসিস সদস্য থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে আরকেটি চ্যালেঞ্জ আছে— বিদেশি তহবিলের প্রকল্পগুলোতে যেন বেসিস সদস্যদের অংশগ্রহণ যেন বাধ্যতামূলক করতে পারি। সে লক্ষ্যে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব। আমরা সিপিটিউয়ের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি— যেহেতু ডোনার ফান্ডের প্রজেক্ট, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তো আমরা ঠেকাতে পারব না। যেন অন্তত একটি বেসিস সদস্য কোম্পানি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়, এরকম এটি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। আশা করছি এটি একটি এসআরও বা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে।
দক্ষ জনবল তৈরিতে নীতিলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সবাই মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা ভলছে। এআই, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, রোবটিক্স— এরকম খাতের জন্য তো লোকবল লাগবে। এটি বেসিস বা সরকার একা করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারবে, কিন্তু কিছুটা। সেজন্য নীতিমালা প্রয়োজন। এখানে বেসিসের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিন পক্ষ মিলে যদি একটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগ্য একটি পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি তৈরি করতে পারি, সেটি অনেক বেশি কার্যকর একটি পদক্ষেপ হবে।
‘এছাড়া এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে লোকবল চলে যায়। সেজন্য আমরা একটি এইচআর নীতিমালা করেছি। একটি কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে গেলে এনওসি থাকা বাধ্যতামূলক, সেই শর্ত জুড়ে দেওয়া রয়েছে। কেউ যদি সেটি না করে, তাহলে বেসিসে অভিযোগ দিতে পারবে। তখন শাস্তিও দেওয়া যাবে,’— বলেন রাশাদ কবির।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বোর্ডে থেকে অনেক কাজ করেছি, সামনে আরও কাজ করতে চাই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক— দুই বাজার নিয়েই কাজ করতে চাই। সদস্য কোম্পানিগুলো যেন ভালো থাকে, ব্যবসা বাড়াতে পারে, নীতি প্রণয়ন করে যেন বাজার সম্প্রসারণ করা যায়— এসব বিষয় নিয়ে কাজ করাই লক্ষ্য থাকবে।’
বেসিস নির্বাহী পরিষদ ২০২২-২০২৩-এর নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর, গুলশানে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ৮৭৬ জন। এর মধ্যে সাধারণ ভোটার ৬৫৪ জন, অ্যাসোসিয়েট ১৮২ জন, অ্যাফিলিয়েট ৩৭ জন ও আন্তর্জাতিক ভোটার তিন জন। নির্বাচনে সাধারণ সদস্যপদে লড়ছেন ২৪ জন, অ্যাসোসিয়েট পদে দুই জন, অ্যাফিলিয়েট পদে দুই জন এবং আন্তর্জাতিক পদে একজন। আন্তর্জাতিক পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সৈয়দ এম কামাল বিনা প্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৮ জন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর