ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে: রেহমান সোবহান
২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:১২
ঢাকা: বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
তিনি বলেন, ‘এখনও অন্যায্য সরকার ব্যবস্থার মধ্যে আমরা রয়েছি। শাসন পদ্ধতি ন্যায়সঙ্গত নয়। পুরো ব্যবস্থায় একটি অন্যায্য সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতেও সেটা প্রকট। ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে।’
শুক্রবার ( ২৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (আইইবি) আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২১তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ও মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। আমরা শুধু স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু মুক্তি এখনও পাইনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা মুক্ত হয়নি। সরকারি ভূমি ব্যবস্থা ঠিক নেই। দারিদ্র্য মানুষের খাস জমি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করছে। প্রান্তিক মানুষ সেটির সুফল পাচ্ছে না, যেটি তাদের পাওয়ার অধিকার। একটি সঠিক বণ্টন ন্যায্যতা সৃষ্টি করতে হবে। যেমন- কৃষক পণ্য উৎপাদন করে কিছুই পাচ্ছে না। আর যারা কিছুই করছে না তারা ভোগ করছে প্রচুর। বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বাজার অর্থনীতিতে প্রচুর বৈষম্য রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানব সম্পদের উন্নয়নে এবং দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করা দরকার। আমাদের অবকাঠামো এবং অর্থনীতির নানা উন্নয়ন হয়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। দেশের উন্নয়নে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেসরকারিখাতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে কিছু বিচারহীনতা রয়েছে। এগুলো দূর করতে পারলে উন্নয়নের সম্ভাবনা আরও সুদূরপ্রসারী হবে। গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে শুধু সংবিধানে গণতন্ত্র থাকলে হবে না। এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ এবং লেভেল প্লেয়িং নিশ্চিত করতে হবে। এক কথায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’
রেহমান সোবহান আরও বলেন, ‘আর্থিকখাতে অব্যবস্থাপনা রয়েছে। যা শিল্পের বিকাশে বড় বাধা। করোনা অর্থনীতিকে অকার্যকর করেছে এবং এতে কিছু সংখ্যক লোক সুবিধা নিয়েছে। এগুলো কখনো কাম্য নয়। এমনভাবে চলতে থাকলে আর্থিকখাতে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। মূলত ক্ষমতা,আইন শৃঙ্খলা, বিচারের মধ্যে সমন্বয় ও প্রয়োগ থাকতে হবে। এটি জনগণের জন্য প্রয়োজন। দুর্নীতি বড় একটি সমস্যা। সিস্টমে জেনারেট করতে না পারলে কোনো কাজে আসবে না। অর্থ বিনিয়োগ করেও কোনো সুফল আসবে না। এ জন্য উচ্চ পর্যায়ে থেকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। এ জন্য সিস্টেমবেজ কাজ করলে পারলে ভাল হবে। জনগণ সুযোগ সুবিধা পাবে। স্বাস্থ্যসেবাও সমস্যা রয়েছে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। আবুল বারাকাতের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন অর্থনীতি সমিতির সিনিয়র দুই সদস্য সুফি মিজানুর রহমান ও নারায়ণ। এদিকে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘এখনও দারিদ্র্যদের ঋণের নামে অরাজকতা চলছে। ক্ষুদ্র ঋণের নামে কয়েকগুণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের নামে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা নেওয়া হচ্ছে। হয়ত এটি আমরা জানি না কিন্তু এটিই সত্য। রাষ্ট্রের আইনি শাসন কাঠামো ঠিক নেই। গরিবদের শোষণ করা হচ্ছে, ধনীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যত মামলা রয়েছে তার ৮০ ভাগ জমি সংক্রান্ত। একেকটি মামলা চলে দীর্ঘসময়। ৪৫ বছর ধরে এসব মামলা চল। যে জয়ী হয় সেও হারে আর যে জয়ী হয় সেও হারে। কারণ এই দীর্ঘ বছরে প্রচুর খরচের খাতায় যোগ হয়।’
সারাবাংলা/এসজে/একে