বড়পুকুরিয়ায় ১ লাখ টন কয়লার সন্ধান, বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুখবর
২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:১২
ঢাকা: কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা আপাতত কেটে গেছে। কারণ খনিতে আরও কয়লার মজুতের সন্ধান মিলেছে। যার পরিমাণ অন্তত ১ লাখ টন। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই পরিমাণ কয়লা দিয়ে অন্তত পাঁচ বছরের বেশি সময় উৎপাদন ধরে রাখা যাবে।
দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়ায় ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নির্মাণ করা বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে আহরণ করা কয়লা দিয়েই এই কেন্দ্রটি পরিচালিত হয়ে থাকে। কয়লা সংকটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট উৎপাদন ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। খনিতে কয়লার মজুত কমে আসায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি শেষ পর্যন্ত চালু রাখা যায় কি না এ নিয়ে শঙ্কায় ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এই আশঙ্কার মধ্যে সুখবর দিলো কয়লা উত্তোলনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনা কনসোর্টিয়াম এক্সএমসি ও সিএমসি।
বাংলাদেশ কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিমাণ মজুত বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছর বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়লা সরবরাহ করা যাবে।
বিসিএমসিএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খনির ১৩২০ ফেইসে তিন লাখ টন কয়লা মজুত থাকার কথা থাকলেও আরও এক লাখ টন কয়লা রয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বিসিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেছেন, কয়লা উত্তোলনকারী চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী খনিতে আরও এক লাখ টন কয়লা মজুত রয়েছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আরও দীর্ঘ সময় পরিচালনা করা যাবে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কয়লা থাকার বিষয়টি জানানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কয়লার সন্ধান পাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য অনেক বড় সুখবর। এখন থেকে কেন্দ্রটি তার পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে। ফলে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যাও নিরসন হবে।
কয়লা উত্তোলনে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হয় বিসিএমসিএল। নতুন চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে চীনা কনসোর্টিয়াম এক্সএমসি ও সিএমসির কাজ শুরু করার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৭২ মাস খনি থেকে প্রতিষ্ঠানটি কয়লা উত্তোলন করবে। এর আগেও চীনা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তিনবার চুক্তিবদ্ধ হয় বিসিএমসিএল।
তথ্য অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যেই এখানে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে যে প্রায় তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয় তার পুরোটাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। ২০১৮ সালে এই খনিতে দুর্নীতির কারণে কয়লা সংকটে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি পরবর্তীতে মজুত থাকা কয়লা দিয়ে পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তার সক্ষমতা অনুযায়ী পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারে না। এখনো ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা মোট সক্ষমতার তিন ভাগের এক ভাগ। অথচ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। শুরু থেকে চীনা কনসোর্টিয়াম এক্সএসমি ও সিএমসি কয়লা উত্তোলন করছে। তিন দফা চুক্তি শেষে গত নভেম্বরে চতুর্থবারের মতো প্রতিষ্ঠানটি চুক্তিবদ্ধ হয়। এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ