Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:২২

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আজ বিশ্বব্যাপী যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর। এই মহান নেতা আমাদের জাতীয় জীবনে এক জ্যোতির্ময় আলোকবর্তিকা।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে “বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ, BANGABANDHU AND THE JUDICIARY মুজিববর্ষ স্মরণিকা “ন্যায় কণ্ঠ- গ্রন্থদ্বয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক জাতির পিতার জীবনে আইন, মামলা ও বিচার কার্যক্রমভিত্তিক মুজিববর্ষ স্মারক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মহাবিজয়ের-মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যাকে কোনো বিশেষণে বিশেষায়িত করে শেষ করা যাবে না। স্বাধীনতা সংগ্রাম’, ‘জয়বাংলা, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ-ছয়দফা আন্দোলন, ‘বাঙালির স্বাধিকার’, ‘বাঙালির স্বাধীনতা’- যাই বলি না কেন এ শব্দগুলোর অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আজ বিশ্বব্যাপী যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু। তাই বলা যায়, এ মহান নেতা আমাদের জাতীয় জীবনে এক জ্যোতির্ময় আলোকবর্তিকা।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত, যার একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে কল্পনা করা যায় না। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ ব্যক্তিত্বের জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ ও দুঃসহ।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর জীবনের মূল্যবান সময়ের অনেকটাই কেটেছে কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। আইন-আদালত, কোর্ট-কাচারি, মামলা-মাকদ্দমা এ সব তার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছিল। বিজয়ের মূলমন্ত্র সম্বলিত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা ও চূড়ান্ত বিজয়।

শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্ভীক অবস্থানের কারণে তিনি শোষিত-নির্যাতিত বিশ্বমানব সমাজের সকল আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রাতঃস্মরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ স্মারক গ্রন্থ এবং মুজিববর্ষ স্মরণিকাটি সুপ্রিম কোর্টের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা হিসেবে বিবেচিত হবে। এই মহৎ কর্মে শরিক হতে পেরে নিজকে ধন্য মনে করছি। নিঃসন্দেহে ইহা আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু জীবনের সাথে আদালতের তথা বিচার বিভাগের সম্পৃক্ততা ও মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টি এক সুবিশাল ক্যানভাসে চিত্রায়িত হয়েছে স্মারক গ্রন্থে। প্রধানমন্ত্রীর লেখাটি নিঃসন্দেহে স্মারক গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ সংযোজন হিসেবে স্বমহিমায় চির অম্লান হয়ে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্ণনার প্রাঞ্জলতায়, উপলব্ধির প্রগাঢ়তায় এবং স্মৃতিচারণের বিশিষ্টতায় তাতে স্নেহাদ্র পিতার সঙ্গে কন্যার সম্পর্কে গভীরতম অনুভূতির মর্মস্পর্শী উপাখ্যানের পাশাপাশি অঙ্কিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও নিয়ত সংগ্রামের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা প্রতিটি পাঠকের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে মামলা, আদালত, নির্যাতনমূলক গ্রেফতার তথা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক আরোপিত আইনি অভিঘাতের ওপর বিশ্লেষণী উল্লেখযোগ্য আলাদা কোনো সংকলন বন্ধ প্রকাশনা ছিল না। এই গ্রন্থ সেই শূন্যতা কিছুটা হলেও দূর করতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বহুমাত্রিক গবেষণার যে বলিষ্ঠ ধারা সূচিত হয়েছে, তা স্বাচ্ছন্দ গতিতে চলমান থাকবে বলে আমি একান্ত চিত্তে প্রত্যাশা করি। বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও জীবনাদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে উর্বর ক্ষেত্রে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন তার প্রধান মাধ্যম ছিল বাংলা ভাষা। তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল আদালতে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করা। স্মারকগ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক ঘটনাবহুল জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতের মোট নয়টি রায় বাংলায় অনূদিত হয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়টির বঙ্গানুবাদও এই স্মারকগ্রন্থে সংযোজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত রায়সমূহের বাংলা অনুবাদ তার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উদ্যোগ এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার ফসল হচ্ছে আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ তথা আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০। যা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্ট শুরুর সময়কালে আপীল বিভাগে মামলা বিচারাধীন ছিল ২৪,৩৫৬ টি। বর্তমানে বিচারাধীন আছে ১৫,৫৫৬টি।’

উল্লেখ্য, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কনফার্ম এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১২৫টি আপীল ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করে। যা থেকে ভার্চুয়াল কোর্টের সাফল্য সহজে অনুমেয়। আমি বিশ্বাস করি ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল কোর্টের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব। বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজেশন করার নিমিত্ত গৃহীত Mission Digital Judiciary, ২০২১ এবং e-Judiciary প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাননীয় আইনমন্ত্রী, মাননীয় আইসিটি উপদেষ্টা এবং তথ্য ওযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রীর নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বিচার বিভাগে যুগান্তকারী সংস্কার সাধিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া স্মারকগ্রন্থ এবং স্মরণিকা বিষয়ক জাজেস উপ-কমিটির আহ্বায়ক আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ননী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ এবং সুপ্রিম কোর্টের কয়েকশ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

জাতির পিতা টপ নিউজ প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর