৩ কারণে খুন, কেটে নেয় হাতের কবজি!
৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুই সপ্তাহ আগে হাতের কবজি কেটে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে একজনকে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত তিন কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে পূর্ব আক্রোশ, পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ আছে। সন্ত্রাসী ভাড়া করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই মো. সুমনকে (৩৪) বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) ফেনীর মোহাম্মদ আলী বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পায় র্যাব।
গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কালা বাদশা পাড়ায় মো. হোসেন আলী বাচা (৪০) নামে একজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হয় তার ভাই মোমেন এলাহী কালু। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছিল, এলাকার মসজিদ-মাদরাসার তহবিল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটে।
আসামি গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহত বাচা ও গ্রেফতার সুমন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। কোনো একসময় বাচা সুমনের মাকে একটা চড় মেরেছিল। এরপর সুমন বাচার সৎ বোনকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সুমন গ্রেফতার হয়ে এক বছর জেল খাটে।’
‘তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে- বাচা, কালু ও মোয়াজ্জেম এরা তিন ভাই বিদেশে ছিল। সম্প্রতি তারা দেশে ফিরে আসে। এর পর তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। সুমন স্থানীয় মসজিদ-মাদরাসার কমিটিতে ছিল। তার চাচাতো তিন ভাই দেশে ফিরে আসার পর সেখানে তার আধিপত্য খর্ব হয়। তিন ভাই বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ শুরু করে। এ নিয়ে সুমনসহ কমিটির লোকজনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব হয়। এর জেরে সুমন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।’
হত্যাকাণ্ডে মোট ১৫ জন জড়িত ছিল বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান। তিনি সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী সোহেল বাহিনীর ১০ জনকে ভাড়া করে সুমন। এলাকার আরও ৪-৫ জন সুমনের সঙ্গে ছিল। হত্যাকাণ্ডের দিন সুমন তার ভাড়া করা সোহেল বাহিনীর লোকজনকে নিয়ে চারিয়ায় একটি একটি চায়ের দোকানে বৈঠক করে। সেখানে তারা বাচা ও তার ভাই কালুর ওপর হামলার পরিকল্পনা সাজায়।
আটটি চাপাতি নিয়ে তারা ভাগাভাগি করে তিনটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে। একটি অটো রিকশা নিয়ে সুমন, সোহেল, হামিদসহ পাঁচ জন ঘটনাস্থল কালা বাদশা পাড়ায় অবস্থান নেন। অপর একটিতে কাইয়ুম, হাশেম, রশিদ, সাহিদ ও আলাউদ্দিন এবং অপর একটিতে আরও চার থেকে পাঁচ জন মিলে ঘটনাস্থলে যায়।
‘ঘটনাস্থলে বাচা ও তার ভাই কালুকে পেয়েই তাদের ওপর হামলা শুরু করে। মাকে চড় মারার প্রতিশোধ নিতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বাচার হাতের কবজি কেটে নেয়। এরপর সবাই মিলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের পর সুমন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি পালিয়ে যায়। সেখান থেকে কুমিল্লায়গিয়ে আত্মগোপন করে। কুমিল্লা থেকে বুধবার চট্টগ্রামে আসার পথে ফেনী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়’- বলেন র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম