করোনা কমলেও গতি আসেনি দুদকে
১ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৩
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের বড় একটি সময় ঘরবন্দি থাকতে হয়েছিল মানুষকে। ওই সময় সাংবিধানিক সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে। চলতি বছরের শুরু থেকেই আবার সবখানে গতি ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও গতি ফিরে পায়নি দুদক। বিদায়ী বছরে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি এই সংস্থার। এমনকি আলোচনায় আসার মতো অনেক ঘটনা ঘটলেও দুদককে নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। গণমাধ্যমে কমিশনের প্রধানদের দুয়েকটি বক্তব্য আর ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ বলেই কেটেছে বছর।
কমেছে অভিযোগ, বেড়েছে মামলা, চার্জশিট
২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে ১২ হাজারের মতো, যেখানে করোনার প্রকোপ সত্ত্বেও ২০২০ সালে দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে ১৮ হাজার ৪৮৯টি। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দুদক অনুসন্ধান করেছে ৩২৬টি মামলা, মামলা করেছে ৩১১টি। অন্যদিকে ২২২টি মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫২৩টি অভিযোগ অনুসন্ধানের পাশাপাশি ২৫৯টি মামলা করেছিল দুদক। সে বছর দুদক ১৬৬টি মামলার চার্জশিট অভিযোগপত্র দিয়েছিল।
নতুন কমিশন গঠন
চলতি বছরের মার্চে কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। আর কমিশনার (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব নেন জহুরুল হক। ওই সময় বিদায় নেন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ও কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের দুর্নীতির অনুসন্ধান অগ্রগতি নেই
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয় ২০২০ সালে। সে সময় দুদকে ডেকে এই সংসদ সদস্যকে টানা কয়েকঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদও করে কমিশন। এ বছরের পুরোটা পেরিয়ে গেলেও সেই অনুসন্ধানের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বেসিক ব্যাংক নিয়ে তদন্তের অগ্রগতি শূন্য
বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার অনিয়ম পায় দুদক। এ ঘটনায় দুদক সব মিলিয়ে ৬০টির মতো মামলা করে। মামলায় আসামির সংখ্যা ১২০ জন। এরপর ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সে তদন্ত শেষ হয়নি। বিদায়ী বছরেও এই মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে। কয়েকবার তদন্ত কর্মকর্তাদের হাইকোর্ট ডেকে কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আলোচনায় পিকে হালদার
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠে। বছরজুড়ে তিনি ছিলেন আলোচনায়। এ ঘটনায় একাধিক মামলাও করেছে কমিশন। অবশ্য আদালত পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এখন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হচ্ছে কমিশন। পিকে হালদারের এই দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত ১১ সহযোগী এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।
এমপি পাপুলকাণ্ড
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। মানবপাচার, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। গত বছরের নভেম্বরে পাপুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পাপুলসহ তার স্ত্রী, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে কমিশন। কিন্তু এ বছরে এসে আর পাপুলকে নিয়ে তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। মামলার পর ১ বছর ১ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করেনি কমিশন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় দুদক
ক্যাসিনো অভিযান শুরু হলে দুদক ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দেয়, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মচারী ও আমলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ৯০ শতাংশ ব্যক্তির বিরুদ্ধেই কোনো মামলা বা অভিযোগপত্র দেয়নি দুদক। এই তদন্তে ধীরগতির কারণে গত বছর করোনা পরিস্থিতির কথা বললেও এ বছরে এসেও সে তদন্তে গতি ফেরেনি। এখন পর্যন্ত ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করেই কমিশনের কার্যক্রম যেন শেষ। এর মধ্যে কেবল অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ১২টি মামলায়।
ইভ্যালিকাণ্ড
অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছিল গ্রাহকদের। ইভ্যালিসহ অভিযুক্ত ছিল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাতে গ্রাহকরা কিছুটা সান্ত্বনা পেলেও চার মাস পর দুদক জানাচ্ছে, ইভ্যালি সম্পর্কিত অভিযোগ আদালতে গড়ানোয় তা আর দুদকের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
রাজারবাগের পিরের সম্পদের খোঁজে দুদক
মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সাত হাজার একর জমি দখলের অভিযোগ ওঠে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। এরপর হাইকোর্ট থেকে বিষয়টি দেখতে দুদককে বলা হয়। এরপর পীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নামে দুদক। কমিশন থেকে এরই মধ্যে পিরের সহায়-সম্পত্তি জানতে সরকারি-বেসরকারি ৫৬টি ব্যাংক ও ৬৪ জেলা রেজিস্ট্রারসহ ১২২টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুদক।
হেফাজত ইসলামের অর্ধশত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান
বিদায়ী বছরের এপ্রিলে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় ৫০ নেতার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছে তাদের সংশ্লিষ্ট ১৯ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ৯ মাসেও সেই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দুদক। তবে কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়নি।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর