Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনিশ্চয়তা, অনিয়ম, ক্ষোভে-বিক্ষোভে ৭ কলেজের বছর পার

নিফাত সুলতানা মৃধা, তিতুমীর কলেজ করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২২ ১০:৪১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজে শিক্ষার্থীদের বছরটা গেল আন্দোলনেই। অনিয়ম ও অনিশ্চয়তার বেড়াজাল ভাঙতে বারবার ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেঁটে পড়েছেন, আবার আশায় বুক বেঁধেছেন। তবে বছর শেষে হিসাবের খাতায় প্রাপ্তিটা তাদের সামান্যই।

৪ ঘণ্টার পরীক্ষা ২ ঘণ্টায়

দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আটকে পড়া পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে এবং করোনাকালীন সময় বিবেচনা করে ৪ ঘণ্টার পরীক্ষা ২ ঘণ্টায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা ৪ ঘণ্টায় ৮০ নম্বরের উত্তর দিতো, সেখানে এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার্থীরা এখন ২ ঘণ্টায় ৮০ নম্বরের উত্তর দেবেন। এই সময় অনুযায়ী অনার্সের সব বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রমোশনের দাবিতে অনশন

তিন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পরের শিক্ষাবর্ষে প্রমোশনের দাবিতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরণ অনশন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির কারণে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাছাড়া, আন্দোলনে সাত জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে চারজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেসময় সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ঘোষণা দেন, তিন বিষয়ে অকৃতকার্যদের প্রমোশনের সুযোগ নেই। তবে সাত কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে রাত ১০টার দিকে তাঁরা কলেজ থেকে বের হতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

চলমান পরীক্ষা হঠাৎ করেই স্থগিত

দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও হঠাৎ রুটিন দিয়ে শুরু হয় সাত কলেজের বিভিন্ন সেশনের পরীক্ষা। চলমান পরীক্ষার মধ্যেই মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট তিন জন ডিনকে নিয়ে সভা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এস মাকসুদ কামাল। এ সভাতেই পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। রাতেই সাত কলেজের সব পরীক্ষাও স্থগিত করে দেওয়া হয়। জানানো হয়, চলতি সব পরীক্ষাও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে ফের পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। এর মাঝে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে নীলক্ষেত ও তিতুমীরের সামনে বিক্ষোভ

চলমান পরীক্ষা হঠাৎ স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে ও তিতুমীর কলেজের সামনে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও হঠাৎ রুটিন দিয়ে শুরু হয় পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু হলেও এখন মাঝপথে করোনার দোহাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কেমন খেলা খেলছে ঢাবি?
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের এমনিতেই অনেক বছর শেষ হয়ে গেছে। তার ওপরে পরীক্ষার সময় তিন মাস পেছানো হলে আমরা কোথায় যাব? এই তিন মাস আমাদের একবছর পিছিয়ে নিয়ে যাবে। তাহলে আমাদের স্নাতক কবে শেষ হবে? আমাদের বর্তমান দাবি— পরীক্ষাগুলো নেওয়া হোক। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছেন তারা।

পরীক্ষা স্থগিত, তবুও কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা

সাত কলেজের চলমান ও আসন্ন সকল পরীক্ষা স্থগিতাদেশের পরেও সকালে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। তিতুমীর কলেজের সামনে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ১২ ঘণ্টা আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়েছে কি না সেসব ভ্রান্তি থেকেই শিক্ষার্থীরা পরিক্ষাকেন্দ্রে চলে আসেন।

সুলতান মাহমুদ আরিফ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, অনেকেই জানে না পরীক্ষা স্থগিত। তাই সাত-সকালে তিতুমীর কলেজের সামনে ফাইলপত্র হাতে বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে আসতে দেখা যায়।

পরীক্ষার দাবিতে উত্তাল নীলক্ষেত

হঠাৎ করে চলমান পরীক্ষা বন্ধের প্রতিবাদ ও তা পুনরায় চালুর দাবিতে ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন। তাদের দাবি, চলমান পরীক্ষা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। কারো একটা-দুইটা পরীক্ষা হলেই শেষ হতো সেই বর্ষের পরীক্ষা। এটা বন্ধ হওয়ায় কমপক্ষে আরও ছয়মাস অপেক্ষা করতে হবে। যা শিক্ষার্থীদের অনেক ধরনের সমস্যায় ফেলবে।

৭ কলেজের পরীক্ষা চলবে

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের চলমান পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পর পরীক্ষা দেওয়ার আশা নিয়ে হাসিমুখে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

রসায়নে ‘গণহারে ফেল’

২০১৮-২০১৯ সেশনের রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষ বিএসসি অনার্স নিয়মিত, অনিয়মিত ও মান উন্নয়ন পরীক্ষায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। ৮৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ৩৬৫ জন। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষোভ জানান শিক্ষার্থীরা। ‘গণহারে ফেল’ দেখার পর ফলাফলে অসঙ্গতির অভিযোগ এনে ফল পুনর্বিবেচনার দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, পরীক্ষার প্রায় একবছর পর ফল প্রকাশিত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রত্যাশিত ফল পাইনি। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় আমাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রত্যাশার একেবারেই বাইরে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ১.৯৯ পয়েন্টে এসেছে (৪ পয়েন্টের মধ্যে)। যারা ২ পয়েন্ট পেয়েছে, তাদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে। কিন্তু যারা ১.৯৯ পেয়েছে, তাদের বিবেচনা করা হবে কি না, এটা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় রয়েছে।

তবে এ নিয়েও শিক্ষকদের কাছে শোনা যায়, ভিন্ন কথা। শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার্থীরা মৌখিক বা ব্যবহারিক নয়, তত্ত্বীয় অংশেই ফল খারাপ করেছে বেশি।

পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার পরিকল্পনা

চলমান করোনাভাইরাস সংকট পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সাত কলেজের পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে অনলাইন পরীক্ষায় সময় ও নম্বর কমতে পারে। সে সাথে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা আয়োজন করলে তাতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ তথা পরীক্ষা দেয়ার সক্ষমতা কতটুকু সেটি যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আন্দোলন

অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে একযোগে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, যে উপায়েই হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা চলবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা আর তাদের ‘গলায় দড়ি’ দেওয়াকে একই মনে করছেন তারা।

 

টিকা দেওয়ার তালিকায় নাম নেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার তালিকায় থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম নেই। এতে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর টিকা পেতে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য ৩৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ তিন হাজার ১৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের নিবন্ধনের সুযোগ করে দিচ্ছে ইউজিসি। কিন্তু সেই তালিকায় নেই সাত কলেজের নাম। এ নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হলে মাকসুদ কামাল বলেন, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে। আমরা আমাদের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
অন্যদিকে, সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ঢাবি কেউ আমাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য চায়নি। কেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের তালিকা হয়নি বিষয়টি জানা নেই। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলা হবে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই যেন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়— সাত কলেজ কার? কে সাত কলেজের? আমাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে উদ্যোগ নিতে হবে সাত কলেজ অধ্যক্ষদের। সাত কলেজের অধ্যক্ষরা আবার বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।

সেশনজট কমাতে ৮ মাসে সেশন শেষের পরিকল্পনা

করোনা মহামারির দীর্ঘ বন্ধে তৈরি হয় সেশনজটের শঙ্কা। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেশনজট নিরসনে সাত কলেজে পরিকল্পনা নেওয়া হয় স্নাতক শ্রেণির এক বছরের সেশন আট মাসে শেষ করার। গত এপ্রিলে পরিকল্পনার কথা জানান ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তবে এখন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের রূপরেখা বা দৃশ্যমান কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সেশন ও সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার। পরীক্ষার দাবি পূর্ণ হলেও সেশনজট নিরসনের বিশেষ পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখেনি।

হল না খুলেই পরীক্ষা

১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় সাত কলেজের বিভিন্ন বর্ষের সশরীরে পরীক্ষা। মাত্র ১০ দিন আগে ঘোষণা দিয়ে করোনাকালে হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ায় বিপাকে পড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর্থিক সংকট আর সল্প সময়ে বাসা খুঁজে পাওয়া কঠিন তাই শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খোলার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তবে হল না খোলার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন সাত কলেজ প্রশাসন। ফলে ভোগান্তি নিয়েই পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে গণহারে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়ন অথবা ১০ দিনের মধ্যে বিশেষ পরীক্ষার নোটিশ, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ক্লাস যাচাই, শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের একাডেমিক সমস্যা নিজ কলেজের মাধ্যমে সমাধান, সব বিভাগের ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ এবং বিভিন্ন বিভাগের আটকে থাকা পরীক্ষার ফলাফল আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ। এই চার দফা দাবি নিয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ ও স্নাতকোত্তর ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে আন্দোলন করেন। জানা যায়, ২০১৫-১৬ সেশনের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষে ফলাফল বিপর্যয় হয়। এতে তিতুমীর কলেজে ২৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৩ জন, ইডেন মহিলা কলেজে ২১০ জনের মধ্যে ১৭৫ জন, সরকারি বাংলা কলেজে ১১৬ জনের মধ্যে ৯২ জন এবং বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে ৪৫ জনের মধ্যে ৩০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগেও একইভাবে ফলাফল বিপর্যয় হয়। যার ফলে আবারও নীলক্ষেত মোড়ে আন্দোলন করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সশরীরে পরীক্ষা দিয়েও ফলাফলে অনুপস্থিত অথবা সিজিপিএ না আসা

সাম্প্রতিক সময়ে বড় ভোগান্তি সশরীরে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিয়েও ফলাফলে অনুপস্থিত আসা, সব বর্ষের সব পরীক্ষায় পাস করার পরও পূর্ণাঙ্গ ফলাফল না হওয়া, দুই বিষয়ের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে ফেল করা এবং বিভিন্ন বর্ষে গণহারে ফেলসহ নানা অসংগতিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে কলেজ প্রশাসন থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী কলেজের একটি বর্ষের নির্দিষ্ট বিভাগের সব শিক্ষার্থীর সিজিপিএ না আসার মত ঘটনা ঘটে।

বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনে ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

অক্টোবর মাসের ২ তারিখ থেকে সাত কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষ ও ৪ অক্টোবর থেকে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুর পর পরীক্ষার সময়সূচী তিনবার পরিবর্তন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করায় পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে শেষ হয়। শুধু স্নাতকই নয়, স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার তারিখ ও পরিবর্তন করা হয়।

যা নিয়ে ক্ষোভ জানায় শিক্ষার্থীরা। একমাসে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। বারবার তারিখ পরিবর্তন করে এখন দুই মাসে শেষ হবে পরীক্ষা। প্রথম তিনটি পরীক্ষা হয়েছে সাতদিনে, পরে তারিখ পরিবর্তন করায় বাকি পরীক্ষা দিতে আরও এক মাস লাগে। এভাবে বারবার তারিখ পরিবর্তনে ভোগান্তিতে পড়েন মেস ভাড়া নেওয়া শিক্ষার্থীরা।

পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা পর ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা স্থগিত

অনার্স ১ম বর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে পরীক্ষার আগে নয়, শুরুর দেড় ঘণ্টা পর স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নন-মেজর ‘রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি’ পরিক্ষাটির প্রশ্ন না দিয়ে ‘প্রিন্সিপাল অব ইকোনমিকস’ প্রশ্ন দেওয়া হয়। পরীক্ষা শুরুর পর প্রশ্ন দেওয়া হলে বিষয়ের সঙ্গে মিল পাননি পরীক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষার বিষয় কোড অভিন্ন ছিল। পরে পরীক্ষার্থীরা বিষয়টি শিক্ষকদের অবহিত করলে তারা আলোচনা করে দেড় ঘণ্টা পরে পরিক্ষাটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।

অনিয়মিতদের প্রশ্নে নিয়মিতদের পরীক্ষা

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান কোর্সের পরীক্ষায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে অনিয়মিতদের প্রশ্ন। এতে বেশ বিপাকে পড়েছেন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের ভুলের কারণে ঘটনাটি ঘটে। অনিয়মিতদের প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি জানানোর পরও এই প্রশ্নেই পরীক্ষা দিতে বলা হয়। একেক রুমে একেক প্রশ্ন দেওয়া হয়। তাছাড়া সব কলেজে প্রশ্নপত্র ভুলের বিষয়টি ঘটেনি। জানা যায়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ঠিক ছিল।

সারাবাংলা/এনএসএম/এএম

সাত কলেজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর