Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা ওয়াসার ৪ লেগুন এখন বিষাক্ত মাছমুক্ত

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৫

পাগলা থেকে ফিরে: ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারের চারটি লেগুনের একটিতেও বিষাক্ত মাছ পাওয়া যায়নি। চারটি লেগুনে মাছ মিলেছে মাত্র ১৬টি। যার মধ্যে একটি লেগুন মাছমুক্ত ছিল। ফলে বলাই যায় ঢাকা ওয়াসার লেগুন এখন বিষাক্ত মাছ মুক্ত। অথচ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ওয়াসার এসব লেগুন থেকে অন্তত দুই মণ মাছ পাওয়া গিয়েছিল।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, চারদিকে নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরি, সার্বক্ষণিক কঠোর নজরদারি আর কর্মকর্তাদের তদারকির ফলে আশেপাশের কেউ লেগুনগুলোতে মাছ দিতে পারেনি। ফলে সেখান থেকে এবার কোনো মাছ মেলেনি।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর পাগলা পয়ঃশোধনাগারের লেগুনগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেগুনগুলোতে প্রথমে বিষ প্রয়োগ করা হয়। পরে বিশাল আকৃতির জাল টানা হয়। প্রথম লেগুনে জাল টানার পর মাত্র ছয়টি টাকি মাছের বাচ্চা উঠে আসে। এছাড়া আর অন্য কোনো মাছ ওঠেনি। এমনকি কোনো পোকামাকড়ও পাওয়া যায়নি।

মাছ ধরে তা পুড়িয়ে ফেলতে তদারককারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মোহাম্মদ আরিফের উপস্থিতিতে লেগুনে রোটেনন ও জাল ফেলা হয়। জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেটা দেখলাম, বাইরে থেকে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। একটি লেগুনে ছয়টি মাছ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যাচ্ছে এখন আর মাছ চাষ হয় না। যেহেতু মাছ মিলছে না সেহেতু বলা যায়, আগে যে বিষাক্ত মাছ বাজারে ছড়িয়ে পড়ত, এখন তা আর নেই। অর্থাৎ বাজার এখন বিষমুক্ত।’

সেখানে উপস্থিত মৎস অধিদফতরের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াসার লেগুনের পানিতে যে অক্সিজেন লেভেল আছে, তাতে কোনো প্রাণী বেঁচে থাকার কথা নয়। ফলে এখানে খুব একটা মাছ পাওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে এটা ঠিক রেখে পানি যাতে আরও পরিষ্কার করা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

লেগুনে মাছের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘আজ পালগা পয়ঃশোধনাগারে মাছ পরিষ্কারের জন্য আমরা উদ্যোগ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশনাটা ছিল, বিষাক্ত মাছ যেন কোনোভাবেই জনগণের মাঝে বিতরণ করা না হয়। এছাড়া হাইকোর্ট সীমানা প্রাচীর করতে বলা হয়েছিল। আমরা সীমানা প্রাচীর করেছি। এখন আর বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। মাছ চাষের চেষ্টাও করতে পারে না। তারপরেও একটা সুযোগ থেকেই যায়। তাই আমরা জাল ফেলে দেখলাম মাছ আছে কি না। যেহেতু আদালতের একটা নির্দেশনা রয়েছে।’

২০১১ সালের ১৩ জুলাই ‘ওয়াসার লেগুনের বিষাক্ত মাছ খাচ্ছে ঢাকার মানুষ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী এই রিট আবেদন করেন।

প্রাথমিক শুনানির পর ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলের ওপর পাঁচ কার্যদিবস শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট বিষয়টি রায়ের জন্য রাখে। সে অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালত রুল মঞ্জুর করে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

২০১৫ সালে আদালতের সাত দফা নির্দেশনায় বলা হয়-

১. আগামী দুই বছরের মধ্যে লেগুন এলাকার চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে।
২. ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দুই মাস পর পর ওষুধ প্রয়োগ করে লেগুনের মাছ নিধন করতে হবে।
৩. লেগুন এলাকায় তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে।
৪. লেগুন এলাকায় নৈশ টহল জোরদার করতে হবে।
৫. জনসচেতনতার জন্য ‘এই মাছ বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং মাছ চাষ ও ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ লেখা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে লেগুন এলাকায়।
৬. লেগুন এলাকার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
৭. ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি গঠন করে মাছ চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।

পর্যায়ক্রমে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে বাহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে মাছ চাষ। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেগুনে রোটেনন প্রয়োগ ও মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াসা। ২০২০ সালে পাগলা পয়ঃশোধনাগার থেকে দুই মণ মাছ পাওয়া গেলেও এবার তা নেই বললেই চলে।

উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসার পাগলা পয়ঃপরিশোধনের আকার প্রায় ২৪৬ একর। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি লেগুন বা পুকুর। প্রতিটি লেগুনের আকার গড়ে ২৫ হাজার বর্গমিটার। বিশাল আয়তনের এই লেগুনে চাষ করা হতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পয়ঃবর্জ্যের পানিতে মাছ চাষ করে তা আবার রাতের আঁধারে বাজারে তোলা হতো। স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন এই বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

ওয়াসা. লেগুন টপ নিউজ বিষাক্ত মাছ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর