আমরা ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি: ইসি মাহবুব
৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৫
ঢাকা: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ‘ভোটের আগে ও পরে’ দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি চলমান ইউপি নির্বাচন বিষয়ে নিজের মতামত জানান।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মৌলিক শর্ত ভোটের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা বিধান। আমরা যথাযথভাবে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর দায় এড়াতে পারবে বলে মনে হয় না।’
‘পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় যেমন টাঙ্গাইল (ডুবাইল ), কুড়িগ্রাম ( যাত্রাপুর ), নেত্রকোণা (দূর্গাপুর ), ফেনী (ছাগলনাইয়া), কুমিল্লার আদর্শ সদর (পাস্তুরি), সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর (জালালপুর), কিশোরগঞ্জ (ভৈরব), রাজশাহী (চারঘাট ), হবিগঞ্জ (সদর) , ঠাকুরগাঁও সদর (আখানগর), গোপালগঞ্জ (কোটালীপাড়া), গাইবান্ধা (জুমারবাড়ি) , যশোর (কেশবপুর), সাভার (আশুলিয়া) ইত্যাদি স্থানে নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে গেছে। যে কোনো মূল্যে ব্যালট পেপারের সুরক্ষা দিয়ে এ অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন—’ বলেন ইসি মাহবুব তালুকদার।
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ যেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই। ইউপি নির্বাচনে এখন উৎসবের বাদ্যের বদলে বিষাদের করুণ সুর বাজছে। কিন্তু নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচনি সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের প্রতিঘাত আরও জোরদার করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে অব্যাহতির উপায় উদ্ভাবন অপরিহার্য। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রথা উঠিয়ে না দিলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘মানবাধিকারের আলোচনা এখন তুঙ্গে। মানবাধিকার উৎসারিত হয় ভোটের অধিকার থেকে। আমাদের সংবিধানের স্পিরিটই হচ্ছে তাই। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষা করা এখনও সুদূরপরাহত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একমাত্র নির্ভেজাল গণতন্ত্রই মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই নির্বাচনি আইন ভঙ্গ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের গোড়া কর্তনের নামান্তর। কতিপয় মাননীয় সংসদ সদস্য সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কলুষিত করেছেন।’
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ আমার কথা— শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘কেবল চিঠি দেওয়া ছাড়া তাদের (সংসদ সদস্য) সম্পর্কে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। কেউ কেউ সেই চিঠি উপেক্ষা করেছেন। এ জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ অনিবার্য ছিল। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার না করা হলে তাদের সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়। অন্যান্য যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাদেরকে সামান্য অর্থদণ্ড প্রদান ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া আইনের কঠোর বাস্তবায়ন অসম্ভব।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব রাতে ব্যলট পেপারের ঘটনাটি বিবিসি প্রকাশ করার পর নির্বাচন কমিশন ‘দিনের ভোট রাতে করে’ বলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।’
সারাবাংলা/জিএস/একে
ইউপি নির্বাচন ইসি মাহবুব তালুকদার টপ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপার