Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের মাইলফলকের বছর’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩১

ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মাসেতুসহ সরকারের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে চলতি ২০২২ সালের জুনে উদ্বোধন করা হবে পদ্মাসেতু। আরও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ২০২২ সাল তাই হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলকের বছর।

শেখ হাসিনা বলেন, আর কয়েক মাস পর— জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মাসেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হবে। জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি ও চতুর্থ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এই ভাষণ দিচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছে।

আরও পড়ুন- ‘বাংলাদেশবিরোধীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টায় রত’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, আমরা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার অঙ্গীকার করেছিলাম। এরপর গত তিন বছরসহ টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রম ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধ দেশ। গত বছর ২০২১-২০২৫ মেয়াদি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এ মেয়াদে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে। শেষ বছর ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।

তিনি জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। রূপকল্প ২০৪১-এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন- নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কতা, দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান

বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলকের বছর। জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মাসেতু। আশা করা হচ্ছে, এই সেতু জিডিপি’তে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে। এছাড়া এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেলের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, এটি রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামি অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।

অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামি বছরের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সরকার বিভিন্ন সময়ে যেসব প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছিল সেগুলোর বাস্তবায়নের তথ্যও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছি। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পায়রাতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী ও মাতারবাড়িতে আরও মোট ৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি নববর্ষের শুরুতে আমাদের জন্য সুখবর— বঙ্গোপসাগরে যে গ্যাস হাইড্রেটের সন্ধান পাওয়া গেছে তার পরিমাণ ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

আরও পড়ুন- ‘দ. এশিয়ায় নেতৃত্বে, পাশে থাকলে ২০৪১ সালে উন্নত হবে বাংলাদেশ’

অতীতের কোনো সরকার গ্রামের দিকে নজর না দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই গ্রামের উন্নয়নকে অন্যতম গুরুত্ব হিসেবে বিবেচনা করে আসছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছিলাম। আজ দেশের প্রায় সব গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পল্লি এলাকায় ৬৬ হাজার ৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩ লাখ ৯৪ হাজার ব্রিজ-কার্লভার্ট, ১ হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ১ হাজার ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার ও ৩২৬টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার শুরু থেকেই সড়ক, মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে আসছে বলে জানান শেখ হাসিনা। রেলওয়েকে যুগোপযোগী করতে ১৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। অনলাইনে ও স্কুল পর্যায়ের জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। মহামারির প্রকোপ কিছুটা কমলে এরই মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়াও চালানো হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। আমাদের প্রায় ৬ লাখ তরুণ-তরুণী আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমরা এ খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছি।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে নজর রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তেমনি খুলে দেবে সম্ভাবনার দ্বার। আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী সুদক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের রয়েছে বিপুল সংখ্যক তরুণ। এই তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।

গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের নেওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারের খুরুশকুলে ১৩৯টি পাঁচ তলা ভবনে ৪ হাজার ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

নারীদের দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা নারী সমাজকে উৎপাদন ও সেবামূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছি।

এর আগে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার শপথের মাধ্যমে শুরু হয় সরকারের তৃতীয় মেয়াদের যাত্রা। সেই সরকার তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পা রাখল আজ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরকারের ৩ বছর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর