ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের ক্যানভাস বারে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অভিযানে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে সংস্থাটি। এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড মইনুল খান।
তিনি জানান, ‘ক্যানভাস রেস্টুরেন্ট এন্ড বার’ প্রতিষ্ঠানটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিয়ে বারে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের সেবা দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করে। যে কারণে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মইনুল খান আরও জানান, অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি দেখানোর জন্য অনুরোধ করে। উপস্থিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সহায়তায় মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি এবং মাদক সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার থেকে মাদকদ্রব্যের মজুদের পরিমাণ বের করতে সার্বিক সহযোগিতা করে। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত রেজিস্ট্রারে উল্লেখিত মজুদের পরিমাণের সঙ্গে ওয়্যারহাউজ এবং দুটি কাউন্টারে রাখা দেশি-বিদেশি মাদকদ্রব্যের তথ্য যাচাই করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় আটক করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
ভ্যাট গোয়েন্দার এই মহাপরিচালক আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটির মার্চ/২০২০ থেকে নভেম্বর/২০২১ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী ৬,১০,১০,৮২১ টাকার বিক্রয় মূল্য মানে বিক্রি করেছে।(সম্পূরকশুল্ক এবং মূসকসহ) যার উপর ৭৯,৫৭,৯৩৩ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান ভ্যাট সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ৫,৪৯,৬১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ৭৪,০৮,৩১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়।এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৮৭,৬৮৯ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়মূল্যের উপর ৮৮,৪২,১৪৮ টাকা সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ১,৯০,১৩৫টাকা সম্পুরক শুল্ক পরিশোধ করেছে।এক্ষেত্রে ৮৬,৫২,০১৩ টাকা সম্পুরক শুল্ক ফাঁকির তথ্যও পাওয়া যায়। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ১,০১,৬৩২ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির রেজিষ্ট্রার অনুসারে কম মদ ও মদজাতীয় পণ্য মজুদ থাকায় এক্ষেত্রে ভ্যাট বাবদ ৩৭,৪০৪ টাকা এবং সম্পুরক শুল্ক বাবদ ৪১,৫৬০ টাকা প্রযোজ্য হবে।
সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১,৬৫,১৮,৭৪৭ টাকা।এছাড়া ভ্যাট আইনের নির্দেশনী উপেক্ষা করে হাতে লেখা কাঁচা চালান ইস্যু করতে দেখা যায়।ইএফডি স্থাপন করা সত্ত্বেও ক্রেতাদের মূসক-৬.৪ দেয়নি।এটি ভ্যাট আইনের লংঘনজনিত অপরাধ।
উল্লেখ্য, বারে যে কোন খাবারের উপর ১৫% ভ্যাট ও ২০% হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য।