দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধসে পড়েছে: জি এম কাদের
১০ জানুয়ারি ২০২২ ২০:১৫
ঢাকা: দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধসে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে মনে হচ্ছে অসহায় ও দুর্বল। নির্বাচনের নামে দেশে খুনোখুনি হচ্ছে। কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন এই ব্যার্থতার দায় এড়াতে পারে না। দেশের এক ভাগ মানুষও যদি বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, তা আমলে নিতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল প্রকাশ করবে না, পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করবে। আর তাও না করতে পারলে নির্বাচন কমিশনের সরে দাঁড়ানো উচিত।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতারা জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ একবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পরপর চারবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। আবার বিএনপি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে এর ধারাবাহিতকা রক্ষা করেছে। আর নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে কারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তা দেশের মানুষ জানে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ কোনোভাবেই অগ্রসর হতে পারবে না।
জি এম কাদের আরও বলেন, সংবিধানের মূল চার নীতির শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। তাই মানুষের অধিকার নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা থাকে না। সমাজতন্ত্র আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্যাগ করে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। আর সামাজিক ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র নেই কোথাও। জাতীয়তাবাদ হারিয়ে যাচ্ছে, নিজস্বতা নেই কোথাও। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন গ্রাস করছে আমাদের।
তিনি বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেই আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা হচ্ছে শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি কল্যাণময় সমাজ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমরা স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সমাজের সব স্তরে বৈষম্য। সরকারি দল করলে এক আইন, সাধারণ মানুষের জন্য অন্য আইন। সরকারি দল না করলে চাকরি ও ব্যবসা করা যায় না। আর শোষণ এখনো বন্ধ হয়নি। স্বাধীনতার আগে শোষণ করে আমাদের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে নেওয়া হতো। এখন আমাদের সম্পদ সারাবিশ্বে পাচার হচ্ছে।
‘দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্টে আছে। বেকারত্ব বেড়েছে। মানুষের আয় নেই, কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। প্রতিবছর শত শত বেকার মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়, সাগর আর মরুভূমি পাড়ি দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। শিক্ষিত বেকাররা হকারি করছে, অটোরিকশা চালাচ্ছে। দেশ তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি। মানুষ সংসার চালাতে পারে না, মাত্র দশ টাকার জন্য ওষুধ কিনতে পারে না অনেকে। আর কিছু কিছু মানুষের টাকা রাখার জায়গা নেই। তারা নামে-বেনামে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। এমন দেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেনি। এমন দেশের জন্য বীর শহিদরা জীবন দেননি,’— বলেন জাপা চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। দেশের মানুষ জানে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে পারবে না। তাই তারা জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে, আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করছি।
অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষকে মুক্তি দেবে। দেশের মানুষ জানে, গণতন্ত্র আর সুশাসন দিতে পারে শুধুই জাতীয় পার্টি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ মানুষের মাঝে দিতে পারবে শুধুই জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে চলছে। আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষকে মুক্তি দেবো।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ টি ইউ তাজ রহমান, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও লিয়াকত হোসেন খোকা; জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. ইলিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান ও ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল হক; ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম; যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মো. সামছুল হক ও সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু; সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. নাসির উদ্দিন সরকার, আনোয়ার হোসেন তোতা, মো. আনিস উর রহমান খোকন ও কাজী আবুল খায়েরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর