শামীম ওসমানের প্রেস কনফারেন্স আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে: সিইসি
১২ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:১৬
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইস্যুতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের করা প্রেস কনফারেন্স আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের হল রুমে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের দিন নির্দেশনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ মন্তব্য করেন।
‘আমি আজ থেকে মাঠে নামলাম’ শামীম ওসমানের এ রকম বক্তব্য বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘উনি তো মুখে বলেছেন, তিনি তা করেননি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘শামীম ওসমানের প্রেস কনফারেন্স আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। তবে তাকে নোটিশ দিয়ে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এরকম অপরাধ তিনি করেননি।’
প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘আপনাদের প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্যান্ড স্যানেটাইজার থাকবে। আর মাস্ক ছাড়া কাউকে নির্বাচনের বুথে বা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না। যারা আসবেন মাস্ক পরে আসবেন। নির্বাচনের কাজে সবসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতা। কারণ সকালের দিকে, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখি কেন্দ্রে নারীদের ভিড়। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন না। তখন সম্ভবও হয় না।
কোনো প্রেসার অনুভব করছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন,‘আগেও করিনি, এখনও করি না। ’
করোনা সংক্রামণ বাড়তে থাকলে নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্তে যাবেন কিনা এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘এটা এখনও বলা যাবে না। সেটা পরে দেখা যাবে। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে যদি সেটা সিরিয়াস অবস্থা ধারণ করে, তাহলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে কোনো সমস্যা দেখি না। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো প্রার্থী তাদের সহনশীলতা এবং নির্বাচনের ব্যাপারেও যে আচরণ এটা আমাকে একটাও প্রশ্নবিদ্ধ করেনি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যথেষ্ট রকমের কর্মতৎপরতা আছে। তারা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, মিটিং করেছেন। তারা যখনই যেটা দরকার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। এটাই বাস্তবতা। আমার মনে হয় খুবই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী আওয়ামী লীগের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘যারা রাজনীতি করেন তারা অনেক কথাই বলেন, তাদের মতো করে। আমরা আমাদের মতো কাজ করি। ’
তিনি বলেন, ‘লোক মারা গেছে সেটা কীভাবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে বার বার বলেছি, কীভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই দায়বদ্ধতা আসে। কোনো ভাবেই আমি দেখি না। এ হিসেব আমার মিলে না। নির্বাচন হয়ে যায়, সবাই বাড়ি চলে যায়। নির্বাচনের মালামাল নিয়ে যে যায়, পথে শত শত লোক দিয়ে তাদের আক্রমণ করে বাক্স নিয়ে যায়। এ জাতীয় ঘটনা যখন ঘটে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে যারা থাকে তারা প্রচুর চেষ্টা করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য আহত হন, রক্তাক্ত হন এবং নিহত হন। একজন বিজিবির কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রার্থী, তার সমর্থক, তাদের সহনশীলতা, নির্বাচনকালীন আচরণ অনুসরণ করা ছাড়া আর অন্য কোনো ভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’
প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে আপনার নিরপেক্ষতা সব থেকে বড় অস্ত্র। একজন সচেতন নাগরিক, শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের একেকটা মত থাকতে পারে, একেকটা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে, রাজনৈতিক দলের প্রতি সহনুভূতি থাকতে পারে, দুর্বলতা থাকতে পারে। এটা সবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। কিন্তু আপনি যখন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন তখন কে কোনো দলের, কে কোনো মতের, কে কোনো ধর্মের কিংবা গোত্রের এটা আপনার মাথায় থাকে না নিশ্চিয়ই। সেভাবেই আপনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমরা সবাই তাই করবো। ’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তারসহ অনেকে।
সারাবাংলা/একে