নাসিক ভোটে উৎসবের আমেজ, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের সন্তুষ্টি
১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১০:১০
নারায়ণগঞ্জ থেকে: মাঘের শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড়। নির্বাচনের উত্তাপের কাছে যেন হেরে গেছে মাঘের শীত। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই ভোটারদের। সকাল ৮টার আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে সব বয়সী নাগরিকদেরই উপস্থিতি। ভোট শুরু হতেই একেকজন ঢুকছেন, বের হচ্ছেন হাসিমুখে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই এমন চিত্র দেখা গেল বিভিন্ন এলাকায়। ভোট শুরুর পর ঘণ্টা দেড়েক সময়ে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ও শিশুবাগ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেল, বেলা বাড়তে বাড়তে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ছে। অন্যদিকে ভোটাররা বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।
এদিন সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সবগুলো কেন্দ্রেই ইভিএম ব্যবহার করে নেওয়া হচ্ছে ভোট।
আরও পড়ুন- লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতব: তৈমুর
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন প্রবীণ ভোটার মো. বাবুল হোসেন (৬০)। জয়নাল ব্যাপারীর সড়কের এই বাসিন্দা সারাবাংলাকে বলেন, খুব সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ইভিএম দিয়ে ভোট দিলাম। খুবই ভালো লাগছে। সিস্টেমটি খুবই সুন্দর।
শিশুবাগ বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন প্রবীণ নারী ভোটার ঝামেনা খাতুন (৯০)। তিনিও এই প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দিয়েছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে খুবই ভালো লেগেছে। মেশিনে (ইভিএম) প্রথমবার ভোট দিলাম। ভোট দিতে কষ্ট হয়নি।
এই কেন্দ্রের আরেক ভোটার মোশাররফ বলেন, ইভিএমে ভোট দিতে ভালোই লেগেছে। প্রথমবার দিয়েছি ইভিএমে। ভালোই লেগেছে।
ইভিএম ব্যবহার করে ভোট দেওয়া নিয়ে এরকম উচ্ছ্বাস মোটামুটি সবার মাঝেই। বিশেষ করে প্রথম যারা ভোট দিচ্ছেন ইভিএম ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে এটি নিয়ে আগ্রহটা বেশি দেখা গেছে। ভোটাররা বলছেন, ইভিএম দিয়ে ভোট দেওয়া সহজ, দ্রুত ভোট দেওয়া যায়। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট স্বচ্ছ হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ছে, বাড়ছে ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের লাইন। সবাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান নগরপিতা বেছে নিতে।
৮০ বছর বয়সী ঝায়েদা বেগমও তেমনি ভোট দিতে এসেছেন। নিজে চোখে দেখেন না। তবু মেয়ে ও পুত্রবধূর সঙ্গে এসেছেন ভোট দিতে। পুত্রবধূ রোকসানার সহায়তায় ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত তিনি।
ঝায়েদা বলেন, ‘ভোট দেওয়ার জন্যে সারারাত সজাগ ছিলাম। সকালেই চলে আসছি। আমার বোন ভোটে দাঁড়িয়েছি। তাই এসেছি।’ সঙ্গে থাকা পুত্রবধূ রোকসানা ইভিএম নিয়ে বলেন, ‘ইভিএমে দ্রুত ভোট দেওয়া যায়। ইভিএমে ভোট দিয়ে ভালো লাগছে।’
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন হাফিজ কামরান। ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে সারাবাংলার কাছে তার মন্তব্য, ভোট ভালো হচ্ছে। উৎসবের আমেজে আমরা ভোট দিচ্ছি।’
২৭ ওয়ার্ডে ১৯২ কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে চলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন চার জন।
এই সিটিতে মেয়র পদে সাত জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে নাসিক নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৯ জন।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন— আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি) ও কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। প্রার্থী সাত জন হলেও সবাই একমত— মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হবে আইভী আর তৈমুরের মধ্যেই।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
ইভিএম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নাসিক নির্বাচন