Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রেন যাত্রীদেরও মাস্ক পরায় অনীহা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:১১

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে যাতায়াতে। কিন্তু রেলপথে এই নির্দেশনা মানছেন না ট্রেনের যাত্রীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বার বার বলা পরও মুখে পরছেন না মাস্ক, বজায় রাখছেন না শারীরিক দূরত্ব।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ব্যহত হচ্ছে। স্টেশনের প্রবেশ পথেই শরীরের তাপমাত্রা মাপার কক্ষ থালেও সেখানে কোনো কর্মী নেই। প্লাটফর্মের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে, কিন্তু যাত্রীরা তা ছুঁয়েও দেখছেন না। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে গেলেও যেন কানে তুলছেন না কেউ।

টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, প্লাটফর্ম থেকে শুরু করে ট্রেনে বসার আসন পর্যন্ত যত মানুষের আনাগোনা দেখা গেল তার বড় একটা অংশের মুখে মাস্কের ব্যবহার চোখে পড়েনি। যাত্রী তো আছেই মাস্ক দেখা গেল না টিটি, ওয়ার্ড বয়ের মুখেও। কম কিংবা বেশি দুই ধরনের দূরত্বের ট্রেনগুলো অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই বললেই চলে।

গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বাড়ছে। বাড়ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যাও। নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে চারিদিকে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। বিশেষ করে গণপরিবহন ও রেলওয়েকে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার থেকে তা কার্যকর করছে রেলওয়ে। কিন্তু বুধবার স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। প্রতিটি ট্রেন অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করলেও তাদের মুখে মাস্ক নেই বললেই চলে।

ঢাকা থেকে সিলেটগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের প্রায় প্রতিটি কামড়াতেই মাস্কহীন যাত্রী দেখা গেছে। তাদের একজন ফজলুল হক। চাকরি করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। মুখে মাস্ক নেই দেখে জিজ্ঞেস করতেই লজ্জিত ভঙ্গিতে সারাবাংলার এই প্রতিবেদক বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মাস্ক ফেলে এসেছি। এখন ট্রেন ছাড়ার সময় হয়েছে, তাই মাস্ক কেনার সময় পাইনি।’

ঢাকা থেকে জামালপুরগামী একটি ট্রেনে একদল শ্রমিক উঠেছে। তাদের একজনের মুখেও মাস্ক নেই। মাস্কের কথা জিজ্ঞেস করতেই নিচে তাকিয়ে মুখ লুকানোর চেষ্টা করলেন। ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাই নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই- এমন খোড়া যুক্তিও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা মানতে প্রত্যেক যাত্রীকে সচেতন করা হচ্ছে নানাভাবে। ভয় দেখানো হচ্ছে জেল-জরিমানারও। কিন্তু কেউ নির্দেশনা মানছেন না।

এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার সারাবাংলাকে জানান, অর্ধেক আসন নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে রেলওয়ের কর্মীরা সবধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করছে। জরিমানা করা হচ্ছে।

কমলাপুর দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে স্টেশন। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার যাত্রীদের যাওয়া-আসা। তাই এই স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি আরও জোরালেভাবে মেনে চলা উচিত বলে মনে করছেন নীতি নির্ধারকরা।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন রোধে গত ১০ জানুয়ারি ১১ দফা শর্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাতে দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরা, অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে মাস্কের ব্যবহার, রেস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা ভ্যাকসিন সনদ প্রদর্শন করা, ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে ভ্যাকসিন সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো, ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন সনদ প্রদর্শন ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা, সর্বসাধারণের করোনার ভ্যাকসিন ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেওয়া, কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সবধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা এবং কোনো এলাকায় ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা না মানলে শাস্তি ও জরিমানার কথাও বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

অনীহা টপ নিউজ ট্রেন যাত্রী মাস্ক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর