কোভিড-১৯ শিশুশ্রমকে আরও ভয়াবহ করেছে
২২ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৫৪
ঢাকা: কোভিড-১৯ এর পরিণতি শিশুশ্রমের চিত্রটিকে আরও ভয়াবহ করেছে তুলেছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে? তা কেউ জানে না। ‘কর্মক্ষেত্রে শিশুশ্রম নিরসনে ট্রেড ইউনিয়ন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আইটিইউসি-বাংলাদেশ কাউন্সিল ওয়েলফেয়ার রাইটস সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় আইটিইউসি-বিসি এর চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন সাকিল আখতার চৌধুরী।
সভায় মূল প্রতিপাদ্যে বলা হয়— সরকারি হিসাব মতে দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৩ লক্ষ এবং যার মধ্যে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ৫ কোটি ২৩ লাখ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩২.৪% (বিবিএস ২০১৬-১৭)। আমরা জানি আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। শিশুরা স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠবে এটি তাদের অধিকার। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। শিশু অধিকার সুরক্ষায় দেশে আইন রয়েছে। কিন্তু আইন বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতার কারণে শিশুরা যথেষ্ট সুরক্ষিত নয়। প্রতিটি শিশুর জন্য মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা না গেলে দেশের কাঙিক্ষত উন্নয়ন অসম্ভব।
মূল প্রতিপাদ্যে শিশুশ্রম বিলোপে সাত দফা করণীয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—
১. সকল শিশুদের জন্য শিক্ষার অবারিত সুযোগ তৈরি করা।
২. দারিদ্রতা দূরীকরণে সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া।
৩. শিশুশ্রম নিরোধে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানো। ৪. আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।।
৫. শিশুপাচারে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া।
৬. সরকার, মালিক পক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন, গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সামাজিক সংগঠনসমূহের সমন্বিত উদ্দ্যোগ নেওয়া।
৭. অবিলম্বে আইএলও কনভেনশন-১৩৮ অনুসমর্থন করা।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ হতে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৪৭ লাখ শিশুশ্রম রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। গ্রামাঞ্চলে শতকরা ৮৩ ভাগ আর শহরে ১৭ ভাগ শিশু নানা ধরনের কাজ করে। কৃষি, মৎস্য, গৃহস্থালি, পরিবহন, নির্মাণ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রমের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। শিশু অধিকার তো দূরের কথা, শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক মানবাধিকার হতেও তারা বঞ্চিত। কর্মস্থলে নির্যাতনের বিষয়টিও আজকাল হরহামেশা দেখা যায়। এক্ষেত্রে কন্যাশিশু ও তরুণীরা অধিকতর বঞ্চনার শিকার। কোভিড-১৯ এর পরিণতি শিশুশ্রমের চিত্রটিকে আরও ভয়াবহ করেছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে? এ প্রশ্ন আজ সবার।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন- ১৩৮ এখনও অনুসমর্থন করেনি। এর আলোকে আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক শিশুশ্রম নিরসনে একটি নীতিমালা প্রণীত হলেও নির্ধারিত ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি খুবই সামান্য।’
কর্মক্ষেত্রকে শিশুশ্রম মুক্ত রাখতে মালিকপক্ষের ভুমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে সরকার, মালিক, শ্রমিক সকলকেই শিশুশ্রম নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, লেবার রাইট্স সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আব্দুল হান্নান, সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ বাদল, সাংবাদিক আতাউর রহমানসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে