সরকার বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে: খন্দকার মোশাররফ
২২ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৩
ঢাকা: বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকার বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি করেছে এটি কারও অজানা নেই। ভোট ডাকাতির কথা বাংলাদেশের মানুষ জানে, দেশে-বিদেশের মানুষ জানে। এরপরে নির্লজ্জভাবে আজকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এটি দেশের একজন মানুষও বিশ্বাস করে না, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলের কেউ বিশ্বাস করে না।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের-২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করে বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে চায়, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। আজকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কেন একটি বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে কারাগারে? তিনি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বন্দি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় একটা গণতন্ত্র সামিট হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের থাকার সুযোগ হয়নি। আমরা সুযোগ পাইনি, কেন না সারাবিশ্ব মনে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশেকে একটি স্বৈরাচারী শাসন গায়ের জোরে দেশ পরিচালনা করছে। যেই দেশে গণতন্ত্র থাকে না সেই দেশে মানবাধিকার থাকে না। আমরা গত ১০/১২ বছর ধরে যে কথা বলছি, এই সরকার গায়ের জোরে থাকার জন্য খুন, গুম এবং মামলা মোকদ্দমা সবকিছু দিয়ে স্টিমরোলার চালাচ্ছে। এ সরকার বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার করে থামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখের ওপর মামলা করেছে তারা। সরকারের সমালোচনা করার জন্য ৩৬ লাখ মামলার আসামি। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ শুরু করে এমন কোন নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এটি কি কোনো গণতন্ত্রের চেহারা হতে পারে? এটা স্বৈরাচারী ফ্যাসিকের সরকারের পক্ষে সম্ভব।’
অপকর্মকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার অপকর্ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে দূতাবাসের মাধ্যমে। যখন দেখল দূতাবাসে কাজ হচ্ছে না তখন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৪ সাল থেকে লবিস্ট নিয়োগ করে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা এটিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রতিষ্ঠানকে মানবাধিকার লঙ্ঘিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেনজারি থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমেরিকা যে সর্তক বার্তা দিচ্ছে এটি কিন্ত সরকার আমলে নিচ্ছে না।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং দেশের চলমান সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যে আইন করেছে তার জাতির সঙ্গে আরেকটি নাটক। আমরা বলেছি আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কখনো কোনো নির্বাচনে যাবে না। কেননা আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সরকারের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং এসব সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই।’
দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘শহীদ জিয়া আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। যিনি সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক এবং বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আজ তার অবদান মুছে ফেলতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকেও দূরে রাখার ষড়যন্ত।’
স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন আনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকেই।
সারাবাংলা/এআই/একে
আওয়ামী লীগ খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন কমিশন বিএনপি র্যাব