Thursday 31 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রয়োজনের ‘বলি’ হলো রাজশাহীর আরও এক ঢোপকল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৫৫

রাজশাহী: আট দশক আগের কথা। রাজশাহীতে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রথম স্থাপন কর হয় ঢোপকল। একে একে এরকম ঢোপকল স্থাপন করা হয় ৯৯টি। সময়ের বিবর্তনে উপযোগিতা হারিয়েছে সেসব ঢোপকল। উন্নয়নের অংশ হিসেবে রাস্তা সম্প্রসারণের ‘প্রয়োজনে’ও অনেক ঢোপকলকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।

সেই একই পরিণতি বরণ করতে হলো নগরীর ফুদকিপাড়া এলাকা সুরেশ স্মৃতি সড়কের পাশের ঢোপকলকে। অথচ এতদিনেও কেবল টিকে থাকা নয়, রীতিমতো সচল ছিল এই ঢোপকলটি। পাইপলাইনের মাধ্যমে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পানি আসত এই ঢোপকলে। সেখান থেকে নিয়মিত পানি সংগ্রহ করতেন এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

কালের চিহ্ন বহনকারী ফুদকিপাড়ার ঢোপকলটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে সোমবার (২৪ জানুয়ারি)। ওয়াসা বলছে, এই ঢোপকলটিও ভাঙা হয়েছে সড়ক সম্প্রসারণের কাজের অংশ হিসেবে। এর ফলে রাজশাহীতে আর মাত্র ১৫টি ঢোপকল টিকে থাকল।

ফুদকিপাড়া এলাকার ঢোপ কলটি ভেঙে ফেলার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একসময় মহামারিতে জীবন রক্ষাকারী এই ঢোপ কলের ওপরের অংশটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিচের অংশ এখনো রয়েছে। সেখান দিয়ে পানি বের হচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি বললেন, ঢোপ কলটি সচলই ছিল। মানুষ এখান থেকে পানি নিত। সেটি ভেঙে ফেলা হলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী শাখার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, ‘ঐতিহ্যের ধারক ঢোপ কলগুলো ভেঙে ফেলা সাংস্কৃতিক অপরাধ। পৃথিবীর অন্যান্য শহরে এ ধরনের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য অর্থ খরচ করা হয়। অর্থ খরচ করে এগুলো সংরক্ষণ করা হয়। আর আমরা এগুলো ভেঙে ফেলছি!’

তবে সাধারণ মানুষের আবেগ বা সংস্কৃতিজনদের আক্ষেপ গায়ে মাখার প্রয়োজন মনে করছেন না ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ। তিনি বলেন, ‘একসময় এগুলোর প্রয়োজন ছিল। এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই। এখনকার যুগের সঙ্গে ঢোপ কলগুলো আর চলে না।’

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রায় ডি এন দাশগুপ্ত ১৯৩৪ সালে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। তখন ডায়রিয়া ও কলেরায় রাজশাহীতে অনেকের মৃত্যু হচ্ছিল। এই সংকট সমাধানে চেয়ারম্যান শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা নেন। এতে সহায়তা করে ‘রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন।

শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তার আহ্বান জানানো হয় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য। এমন আহ্বানে সাড়া দেন পুঠিয়ার মহারানি হেমন্তকুমারী— একাই দান করেন ৬৫ হাজার টাকা। স্থাপন করা হয় একটি পানি শোধনাগার। এরপর তখনকার ছোট্ট শহরটির মোড়ে মোড়ে পানি পৌঁছে দিতে পশ্চিমে কোর্ট, পূর্বে রামচন্দ্রপুর, পদ্মার পাড় ও গৌরহাঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় স্থাপন করা হয় ৯৯টি ঢোপ কল।

ইতিহাসের বইগুলো বলছে, উড়িষ্যা থেকে রাজমিস্ত্রি এনে নগরীর পাঁচআনী মাঠে তৈরি করা হয় সিমেন্টের ঢোপ কলগুলো। প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র আনা হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। ঢোপ কলগুলোর উচ্চতা ১২ ফুট, ব্যস চার ফুট। পানির ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। ঢোপ কলগুলোর প্রতিটিই ছিল একটি ‘রাফিং ফিল্টার’। স্থাপনের সময় সারাদিনে মাত্র দুই ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। এ জন্য প্রতিটি ঢোপ কলকে পানি রিজার্ভ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ফলে সারাদিনই পানি পাওয়া যেত।

ওয়াসার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আগের শোধনাগার ছেড়ে ঢোপ কলগুলোকে ওয়াসার পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ার উপযোগী নয় জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ঢোপ কলগুলো ভেঙে ফেলতে শুরু করে।

পুরনো স্থান থেকে তুলে কিছু কিছু ‘মৃত’ ঢোপ কল অবশ্য রাস্তার পাশে রেখে দেওয়া হয়েছে। এবারে সেই তালিকাতে যুক্ত হলো ফুদকিপাড়া সুরেশ স্মৃতি সড়কের পাশের ঢোপ কলটি। বাকি ১৫টি ঢোপ কলও হয়তো প্রবীণ সঙ্গীদের মতোই শেষক্ষণের প্রহর গুনছে!

সারাবাংলা/টিআর

কালের ঐতিহ্য ঢোপকল ভাঙল ঢোপকল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির ৪ নেতা
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৬

কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৪০

সম্পর্কিত খবর