Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মারা যাচ্ছেন রক্তচাপ-ডায়াবেটিসে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৪৪

ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে বাড়ছে অপরিণত মৃত্যু। যত মৃত্যু হয় তার ১০ জনে মধ্যে ৭ জনই অসংক্রামক ব্যাধিতে মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারসহ আরও কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ মারা যায়। এসব রোগে ৩০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে বেশি মৃত্যু হয় । এ মৃত্যু এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বড় বাধা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জাতীয় অসংক্রামক রোগ বিষয়ক (১ম জাতীয় এনসিডিস কনফারেন্স-২০২২ বাংলাদেশ) কনফারেন্সের প্রথম দিনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন সকাল ৯টায় জাতীয় অসংক্রামক রোগ বিষয়ক (১ম জাতীয় এনসিডিস কনফারেন্স-২০২২ বাংলাদেশ) কনফারেন্স উদ্বোধন করা হয়। এ দিন তিনটি সেশনে ভাগ করে এই কনফারেন্সে আলোচকরা বক্তব্য রাখেন। কনফারেন্সে অসংক্রামক রোগ বিষয়ে নানা ধরণের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

বিভিন্ন গবেষণা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে এমন তিনজনের একজন কিডনি রোগে ভুগছেন। তা তারা জানে না। দেশে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জনই জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অর্ধেকের বেশী জানেন না উচ্চ রক্তচাপ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। ১০০ জনের মধ্যে ৭৭ জন ওষুধ খাচ্ছে কিন্তু তাদের উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। একই অবস্থা ডায়াবেটিকসের ক্ষেত্রেও।

প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, দেশে ৩৫ বছরের উপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারসহ কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে। এ প্রতিরোধের জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশে অসংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত যেসকল সভা-সেমিনার হয় সেগুলোতে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি করেন ডা. শামীম হায়দার।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে, সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

অসংক্রামক ব্যাধি নিরূপণে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম (বিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্লাটফর্ম এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম, আইসিডিডিআর,বি, ব্র্যাক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পপুলার মেডিকেল কলেজসহ ৩০টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলন হচ্ছে।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ আরও ৩০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলন চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এদিন সকালের উদ্বোধনী সেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলী। এই সেশনে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন কবির, পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপার্সন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) অধ্যাপক আখতার হোসাইন।

পরবর্তীতে বিজ্ঞান সেশনে বক্তব্য রাখেন ডা. জামান, ডা. শামসুল আরেফিন, ভারতের ডা. আরুন জোস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব, অর্গানাইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ, ডা. আফরিন ইকবাল, ডা. আনোয়ার হোসেন।

কনফারেন্সে আরও বক্তব্য রাখেন ডা. তাহনিয়াহ হক, ডা. মারুফা মুস্তারি,ডা. শাহজাদা সেলিম, ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, ডা. নুসরাত হোসেন শেবা, ডা. সাদিয়া নুর, ডা. তন্ময় সরকার, ডা. জেবা মাহমুদ, অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন, ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ওসমানী, অধ্যাপক ডা. ব্রায়েন গডম্যান, ডা. বেদোওরা জাবিন, ডা. থান চো, ডা. শেখ দাঊদ আদনানসহ অন্যান্যরা।

সন্ধ্যার সেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রেস আধানম গেব্রিয়েসিস।

সন্ধ্যার সেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রেস আধানম গেব্রিয়েসিস।

দিনের শেষভাগে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সন্ধ্যার সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে সম্মেলন উপলক্ষে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল তেদ্রেস আধানম গেব্রিয়েসিস।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রুহুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, বাংলাদেশ শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, ইউকে দূতাবাসের হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাট্টার্টন ডিকসন, বিএনসিডিএফ’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন, ইউনিসেফ’র ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ ভিরা মেনডনকা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালটেন্ট ডা. তৌফিক জোয়ার্দারসহ অন্যান্যরা।

সম্মেলন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপি, ওরবিজ ইন্টারন্যাশনাল, ট্রমা সেন্টার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল, রেনেটা ফার্মাসিটিক্যাল, নোভিস্থা ফার্মাসিটিক্যালসহ অনেক ন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান।

সম্মেলনের তৃতীয় দিনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ছয় জন বিশিষ্ট চিকিৎসককে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক এবং ছয় জন চিকিৎসককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

১ম জাতীয় এনসিডিস কনফারেন্স-২০২২ বাংলাদেশ অসংক্রামক রোগ উচ্চ রক্তচাপ ক্যান্সার ডায়াবেটিস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর