মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে শঙ্কা কাটছেই না
২৮ জানুয়ারি ২০২২ ১০:১২
ঢাকা: কথা ছিল এবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট থাকবে না। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেছিলেন, যে সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়েছিল, সে পথে আর হাঁটবেন না। এতে করে কম খরচে কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেসব কথা কিংবা পরিকল্পনা ছাপিয়ে সামনে এলো ২৫ সিন্ডিকেট আর তাদের সঙ্গে ২৫০ এজেন্টের (দালাল) নাম। মালয়েশিয়া সরকার থেকে দেওয়া তথ্যমতে, এই ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং তাদের সঙ্গে আড়াইশ এজেন্টই কেবল এবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবেন। দেশের বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তই যদি চূড়ান্ত হয়, তাহলে এই শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া যেমন স্বচ্ছ হবে না, অন্যদিকে বাড়বে অভিবাসন ব্যয়। তাদের শঙ্কা শেষমেশ শ্রমবাজারটি না মুখ থুবড়ে পড়ে।
দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের অন্যতম জনশক্তি রফতানির বাজার মালয়েশিয়া। জানা যায়, ওই সময়ে মাত্র ১০টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয়। ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনস্যালট্যান্টস লিমিটেড, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস ও শানজারি ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি সিন্ডিকেট তৈরি করে কর্মী পাঠানো শুরু করে। এদের কারণে মালয়েশিয়া যেতে একেকজন কর্মীকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আর নানান দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বেশিদিন এগোয়নি। তারপর কেটে যায় তিন বছর। দেনদরবার করে পুনরায় শ্রমবাজারটি খোলার প্রক্রিয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে জানা গেল, এবারও সিন্ডিকেট ছাড়া কর্মী পাঠানো যাবে না।
আর এবারও সিন্ডিকেটের শঙ্কা স্পষ্ট হচ্ছে। গত ১৪ জানুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে মালয়েশিয়া সরকারের পাঠানো চিঠিতে মাত্র ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ওই চিঠির জবাব গত ১৮ জানুয়ারি পাঠানো হয়। সেখানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, যাতে সরকারের নিবন্ধিত সকল রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও সে জবাব এখনো এসেছে কি না জানা যায়নি। খুলতে যাওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে এমন পরিস্থিতিতে আবারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, এই সিন্ডিকেটের কারণেই ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম এবার হয়তো ওই বিষয়ের আর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু সেই সিন্ডিকেটই হলো। আমাদের আশঙ্কা বাজারটি না আবার মুখথুবড়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে সকল এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়।
অভিবাসী বিশেষজ্ঞ শাকিরুল ইসলাম বলেন, যে সিন্ডিকেটের কারণে বাজারটি বন্ধ হয়ে গেল, সেই বিষয় কি করে মেনে নেওয়া যায়। এটি খুবই শঙ্কার বিষয় যে বাজারটি কন্টিনিউ করা যাবে কি না। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটমুক্ত না হলে কম খরচে কর্মী পাঠানো সহজ হবে না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, কর্মীদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তিনি আবারও বললেন, কোনো সিন্ডিকেটকে আমরা প্রমোট করি না। আমরা চাই সকল নিবন্ধিত এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়। আমরা চাই দেড় লাখের নিচে থাকুক অভিবাসন ব্যয়। সরকার ফি নির্ধারণ করে দেবে তার বাইরে বেশি যদি কেউ নেয় তাহলে আইনের প্রয়োগ হবে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ নতুন করে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
সারাবাংলা/জেআর/এএম