সিইসি’র মিথ্যাচারে আমরা স্তম্ভিত: সুজন
২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৪৩
ঢাকা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই তিনি মিথ্যাচার করছেন। তিনি বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। এ সব অপকর্ম আড়াল করতেই তিনি মিথ্যাটর করছেন। সিইসি‘র মিথ্যাচারে আমরা স্তম্ভিত বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন।
শনিবার ( ২৯ জানুয়ারি) সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ‘মিথ্যাচারের প্রতিবাদে’ সুজন-এর পক্ষ থেকে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সুজন-সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘যৌক্তিক সমালোচনার যুৎসই জবাব না থাকলে সমালোচনাকারীর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি অপকৌশল। ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যবহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনও কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মাঝে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা প্রদান করে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ দু’টি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দু’টির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ উঠা সম্পূর্ণ অমূলক। অথচ কে এম নূরুল হুদা ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।’
আরও পড়ুন: কোটি টাকা অনিয়ম করেছেন বদিউল আলম মজুমদার: সিইসি
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা এখন আইনে অন্তর্ভূক্ত। আইনুযায়ী এসব তথ্য না দিলে কিংবা তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিলে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কথা এবং তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে নির্বাচনও বাতিল হওয়ার কথা। তাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো হলফনামার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা, যাতে হলফনামা সত্যিকারার্থে ‘আমলনামায়’ পরিণত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখে, যা করতে নূরুল হুদা কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সিইসি হুদা আরও অভিযোগ করেছেন যে, ড. মজুমদার কমিশন থেকে কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করতে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক লোক নিয়ে তার অফিসে হাজির হয়েছেন। তার এ মিথ্যাচারে আমরা স্তম্ভিত। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই সুজন নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন এবং তা পদ্ধতিগতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই। একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সমালোচনার সদুত্তর না থাকলে, কৃতকার্যের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে সমালোচনাকীরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ পন্থা। এটি একটি নিকৃষ্ট পন্থা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি আশ্চর্য হইনি, পাঁচ বছর তিনি এভাবেই কাটিয়েছেন। তার কৃতকাজের বিচার চেয়ে জন্য আমরা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছিলাম। আজ হোক কাল হোক এ জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নূরুল হুদার নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অনেক। রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তারা এ কথাগুলো উঠিয়ে নিজেদের কথাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। সুজন কারও কাছ থেকে টাকা নেয় না, চায়ও না। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধেই কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সুজন তথ্য প্রচারের কাজ করেছেন। যারা নির্বাচন ও ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করছেন তাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।’
সারাবাংলা/জিএস/একে