বীর নিবাসের ঘরটিও ভেঙে গেছে মুক্তিযোদ্ধা মতিলালের
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৫৫
নেত্রকোনা: ‘আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবন কাটছে মানুষের বাড়িতে কাজ করে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে সারা জীবন কাটাইছি অন্যের বাড়ির ছনের ছাউনি ও পাটখড়ির বেড়ার ঘরে। স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন বলেই শেষ বয়সে একটা ঘর হাইছি হেইডাও ভাইঙা গেছে’— বীর নিবাসের ভাঙা ঘর দেখিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের মান্দাউরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল তালুকদারের স্ত্রী নয়নতারা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মান্দাউরা গ্রামের মৃত সুরেন্দ্র তালুকদারের ছেলে মতিলাল। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পৈত্রিক কোনো সম্পত্তি না থাকায় কয়েকযুগ কাটিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। তারই সহদোর বড় ভাই গিরিন্দ্র তালুকদারের আশ্রয় মিলেছে ছত্রমপুর গুচ্ছ গ্রামে। একটি বোনও ছিল তার, দীর্ঘদিন আগে সে ভারত চলে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওয়াত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বীর নিবাস বরাদ্দ পায় মতিলাল। কিন্তু ঘর নির্মাণ করার বছর ঘুরতেই সামনের অংশ ভেঙে যায়। প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে মতিলালের বীর নিবাসের তেমন কোনো খোঁজও রাখেনি সংশ্লিষ্টরা।
বীর নিবাসের ঘরে লাগানো নেমপ্লেইটের তথ্যনুযায়ী দেখা যায় কাজটি বাস্তবায়ন করেন এলজিইডি। কোন অর্থবছরে ঘরটি বরাদ্দ বা নির্মাণ করা হয়েছে নেমপ্লেইটে এর তথ্যও দেওয়া হয়নি।
মদন এলজিইডি অফিসে বেশ কয়েকদিন ঘুরেও এ বিষয়ে কোনোরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মদন উপজেলায় এই বীর নিবাস প্রকল্পের বরাদ্দ হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল তালুকদার বলেন, ‘আমার বাবার কোনো জমি নেই। বড় ভাই থাকেন গুচ্ছগ্রামে। ১০ শতাংশ জমি কিনে ঘরের জন্য আবেদন করার পর ঘর পেয়েছি। তিন বছর আগে সরকার আমারে ঘর করে দিয়েছে। ঘরের দরজাগুলো ভালো করে লাগানো হয়নি তাই টিন দিয়ে কোনোরকম আটকে রাখছি। ঘরের কাজ ভালো হয়নি, তাই নির্মাণ করার কিছু দিন পরেই সামনের অংশ ভেঙে পরে। এ বিষয়ে কেউ কোন খোঁজ খবরও নেয়নি।’
মদন উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়েল জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বীরনিবাসের ভাঙা ঘরটির খোঁজ নিয়ে দেখবো।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘বীরনিবাসের ঘর ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভেঙে যাওয়ার ঘরটির খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও