বায়ুদূষণে ধুঁকছে দেশ, কোন জেলায় মাত্রা কত
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:০৯
ঢাকা: অধিকাংশ বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও এবারই প্রথম দেশের ৬৪টি জেলার বায়দূষণ নিয়ে গবেষণা করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জেলার জেলা শহরগুলোতে সাত ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের পিএম২.৫ মান পর্যবেক্ষণ করে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার গাজীপুর জেলা, ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
এই গবেষণায় ৬৪টি জেলার যেসব এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে সংবেদনশীল এলাকা ৫৩১টি (১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ), আবাসিক এলাকা ৪৪০টি (১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ), মিশ্র এলাকা ৪০৭টি (১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ), বাণিজ্যিক এলাকা ৫৭৫টি (১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ), রাস্তার সংযুক্তি এলাকা ৩৫৮টি (১১ দশমিক ৩২ শতাংশ), শিল্প এলাকা ৪৩২টি (১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং গ্রামীণ এলাকা ৪২০টি (১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ)।
ক্যাপস জানিয়েছে, এই স্থানগুলো থেকে স্বয়ংক্রিয় এয়ার কোয়ালিটি মনিটর (AEROQUAl S-500, New Zealand) ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসপিএসএস ও আর্কজিআইএস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বায়ুর মান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া গবেষণার জন্য বায়ু অধিদফতরের সূচক অনুসরণ করা হয়েছে, বৈশ্বিক বায়ুদূষণ পরিমাপক সংস্থা একিউএয়ারের একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) অনুসরণ করা হয়নি। গবেষণা প্রবন্ধটি হেলথ অ্যান্ড পল্যুশন নামক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে পিয়ার রিভিউ ও প্রকাশনার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুমান সমীক্ষা ২০২১ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন- ‘নির্মল বায়ু’র উপস্থিতি মাত্র ১০ জেলায়
ক্যাপস পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার গবেষণার প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বায়ুদূষণের কারণে হয়ে থাকে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর ৪.২ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশের বিভিন্ন শহরে বসবাসের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় বায়ুদূষণের উৎস, পরিমাণ এবং ক্ষতিকর দিকগুলো নির্ণয় করার জন্য অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমানের নেতৃত্বে ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল বায়ুমানের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করেন।
বায়ুমানের ভিত্তিতে জেলাগুলোর দূষণের অবস্থান
গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সর্বমোট ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) দেড় গুণেরও বেশি। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি দূষণ পাওয়া গেছে। এই জেলার বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ২৬৩.৫১ মাইক্রোগ্রাম। গাজীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ। এই দুই জেলায় বায়ুতে দূষণের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ২৫২.৯৩ মাইক্রোগ্রাম ও ২২২.৪৫ মাইক্রোগ্রাম।
সবচেয়ে দূষিত বায়ুর এই তিন শহরের বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো এই প্রধান তিনটি শহর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী বায়ুদূষণের মাত্রায় ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম এবং ১০ম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং কিশোরগঞ্জ।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত জেলা হলো মাদারীপুর। এই জেলার বায়ুতে দূষণের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪৯.০৮ মাইক্রোগ্রাম। এর পরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী ও মেহেরপুর। বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সরোজমিনে এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা এবং প্রাকৃতিক জলাধার থাকার কথা উঠে এসেছে গবেষণায়। এ ছাড়াও এসব এলাকায় রাস্তা সংস্কার কাজের পরিমাণ খুব একটা চোখে পড়েনি।
৭ ধরনের ভূমির ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে, সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ছিল মিশ্র এলাকায়, যার মান প্রতি ঘনমিটারে ১১১.৯০ মাইক্রোগ্রাম। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাণিজ্যিক (১১১.৪ মাইক্রোগ্রাম), রাস্তার সংযুক্তি (১১০.৮ মাইক্রোগ্রাম), আবাসিক, শিল্প (১০৬.৭ মাইক্রোগ্রাম) এবং সংবেদনশীল এলাকা (৯৭.৩ মাইক্রোগ্রাম)। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায় যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৪.০২ মাইক্রোগ্রাম।
আরও পড়ুন- সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ গাজীপুরে, সর্বনিম্ন মাদারীপুর
অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর ১৮ জেলা
৬৪টি জেলার মধ্যে ১৮টি (২৮.১৩%) জেলায় গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২১ মাইক্রোগ্রাম এর চেয়ে বেশি। একে অতিরিক্ত মানের বায়ুদূষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ দূষণ গাজীপুর (২৬৩.৫১ মাইক্রোগ্রাম), দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা (২৫২.৯৩ মাইক্রোগ্রাম), তৃতীয় নারায়ণগঞ্জ (২২২.৪৫ মাইক্রোগ্রাম), চতুর্থ হবিগঞ্জ (২২০.১১ মাইক্রোগ্রাম), পঞ্চম নোয়াখলী (২০৪.০১ মাইক্রোগ্রাম), ষষ্ঠ টাঙ্গাইল (১৮৬.৩২ মাইক্রোগ্রাম), সপ্তম কক্সবাজার (১৮৩.৪১ মাইক্রোগ্রাম), অষ্টম চাঁদপুর (১৭০.৪২ মাইক্রোগ্রাম), নবম চট্টগ্রাম (১৬৫.৩১ মাইক্রোগ্রাম), দশম কিশোরগঞ্জ (১৬৫.১৩ মাইক্রোগ্রাম), একাদশ মৌলভীবাজার (১৫৪.৮১ মাইক্রোগ্রাম), দ্বাদশ লক্ষ্মীপুর (১৪৯.০২ মাইক্রোগ্রাম), ত্রয়োদশ পঞ্চগড় (১৪২.৩১ মাইক্রোগ্রাম), চতুর্দশ ময়মনসিংহ (১৩৮.১১ মাইক্রোগ্রাম), পঞ্চদশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া (১৩৪.৭২ মাইক্রোগ্রাম), ষোড়শ ফেনী (১২৮.৪১ মাইক্রোগ্রাম), সপ্তদশ ঠাকুরগাঁও (১২৫.৩২ মাইক্রোগ্রাম) ও অষ্টাদশ জামালপুর (১২১.৬১ মাইক্রোগ্রাম)।
৩৬ জেলায় মধ্যম মানের বায়ুদূষণ
দেশের ৩৬টি (৫৬.২৫%) জেলার বায়ুমান মধ্যম মানের দূষিত অবস্থানে ছিল, যা দেশের মোট ভূমির ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এগুলো হল যশোর (১১১.১২ মাইক্রোগ্রাম), মুন্সিগঞ্জ (১০৩.৭২ মাইক্রোগ্রাম), মানিকগঞ্জ (১০১.৯১ মাইক্রোগ্রাম), শেরপুর (১০০.৪২ মাইক্রোগ্রাম), নেত্রকোনা (৯৯.৬৩ মাইক্রোগ্রাম), বরগুনা (৯৮.৫৮ মাইক্রোগ্রাম), খাগড়াছড়ি (৯৮.১৭ মাইক্রোগ্রাম), সিলেট (৯৭.০২ মাইক্রোগ্রাম), গোপালগঞ্জ (৯৪.৪৭ মাইক্রোগ্রাম), নরসিংদী (৯৩.৬৫ মাইক্রোগ্রাম), গাইবান্ধা (৯৩.৩৩ মাইক্রোগ্রাম), রাঙ্গামাটি (৯২.০৭ মাইক্রোগ্রাম), চুয়াডাঙ্গা (৯০.৩ মাইক্রোগ্রাম), সুনামগঞ্জ (৮৯.০৫ মাইক্রোগ্রাম), পিরোজপুর (৮৭.৯৩ মাইক্রোগ্রাম), বগুড়া (৮৭.০২ মাইক্রোগ্রাম), কুমিল্লা (৮৬.৭৭ মাইক্রোগ্রাম), মাগুরা (৮৬.০১ মাইক্রোগ্রাম), লালমনিরহাট (৮৬.০১ মাইক্রোগ্রাম), বান্দরবন (৮৪.০৪ মাইক্রোগ্রাম), নওগাঁ (৭৯.৪৭ মাইক্রোগ্রাম), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৭৯.০৪ মাইক্রোগ্রাম), ঝালকাঠি (৭৭.০৫ মাইক্রোগ্রাম), ভোলা (৭৮ মাইক্রোগ্রাম), নীলফামারী (৭৬.৮৭ মাইক্রোগ্রাম), শরীয়তপুর (৭৬.৫ মাইক্রোগ্রাম), দিনাজপুর (৭৪.৯৭ মাইক্রোগ্রাম), ঝিনাইদহ (৭৪.৫৮ মাইক্রোগ্রাম), বরিশাল (৭৩.৬৪ মাইক্রোগ্রাম), সাতক্ষীরা (৭২.৪৪ মাইক্রোগ্রাম), ফরিদপুর (৭২.২৪ মাইক্রোগ্রাম), বাগেরহাট (৭১.১১ মাইক্রোগ্রাম), রংপুর (৭০.১৩ মাইক্রোগ্রাম), নড়াইল (৭০.০৭ মাইক্রোগ্রাম), কুষ্টিয়া (৭০.০৩ মাইক্রোগ্রাম) এবং খুলনা (৬৭.০১ মাইক্রোগ্রাম)।
বিভাগভিত্তিক বায়ুদূষণ
২০২১ সালে বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর মান প্রতি ঘনমিটারে ১০৩.৬২ মাইক্রোগ্রাম ছিলো, যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৫৯ গুণ বেশি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে বায়ুদূষণ নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত মানের বায়ুদূষণ হয়। এই তিন বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর ঘনত্ব যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ১৩৩.৮৫, ১৩৬.০২ এবং ১৪০.২৪ মাইক্রোগ্রাম। অন্যদিকে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ মধ্যম পর্যায়ের দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই পাঁচ বিভাগের বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর পরিমাণ যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৬৬.৮৪, ৬৮.৯৪, ৭৬.৫৯, ৯১.৫২ এবং ১১৪.৯৩ মাইক্রোগ্রাম।
বিভাগীয় শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি
দেশের ৮ টি বিভাগীয় শহরগুলোর গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ এর মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১৫.০৭ মাইক্রোগ্রাম, যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৭৭ গুণ বেশি। ক্যপসের গবেষণা থেকে উঠে আসে ৮টি বিভাগীয় শহরের মধ্যে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা (প্রতি ঘনমিটারে ২৫২.৯৩ মাইক্রোগ্রাম) ও তালিকায় সর্বনিম্নে রয়েছে রাজশাহী শহর (প্রতি ঘনমিটারে ৫৬.৪১ মাইক্রোগ্রাম)। দূষণ অনুযায়ী বিভাগীয় জেলা শহর গুলোর ক্রম হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ও রাজশাহী।
উপকূলীয় ১৯ জেলায় মধ্যম থেকে অতিরিক্ত মানের বায়ুদূষণ
২০২১ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলার গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর মান প্রতি ঘনমিটারে ১০৬.৮২ মাইক্রোগ্রাম ছিলো, যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৬৪ গুণ বেশি। গবেষণা থেকে দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকার মধ্যে শুধুমাত্র পটুয়াখালির বায়ুমান ভালো বায়ুর পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু ফেনী, লক্ষীপুর, চট্রগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী এলাকার গড় বায়ুমান ছিল যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ১২৮.৪, ১৪৯, ১৬৫.৩, ১৭০.৪, ১৮৩.৪ এবং ২০৪ মাইক্রোগ্রাম, যা বায়ুদূষণ মাত্রা অনুযায়ী অতিমাত্রার দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে, খুলনা, নড়াইল, বাঘেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, শরিয়তপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বরগুনা, এবং যশোরের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর মান যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৬৭.০১, ৭০, ৭১.১, ৭২.৪৪, ৭৩.৬, ৭৬.৫, ৭৭.০৫, ৭৮, ৮৭.৯৩, ৯৪.৪৭, ৯৮.৬ এবং ১১১.১ মাইক্রোগ্রাম, যা বায়ুদূষণ মাত্রা অনুযায়ী মধ্যম পর্যায়ের দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
পাহাড়ের বায়ুদূষণ
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ- এই সাত পাহাড়ি জেলার মধ্যে সামগ্রিকভাবে হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। এই দুই জেলার অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর পরিমাণ ২২০.১১ এবং ১৫৮.৮১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায় যা নির্ধারিত মান মাত্রার ৩.৩৮ এবং ২.৪৪ গুণ বেশি। বাকি পাঁচ জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবন, সিলেট এবং সুনামগঞ্জ-এ প্রতি ঘনমিটারে ৯৮.১৭, ৯২.০৭, ৮৪.০৪, ৯৭.০২ এবং ৮৯.০৫ মাইক্রোগ্রাম।
সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণ রোধে ১৫ টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—
স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ
১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে দূষিত শহর গুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।
৩. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে।
৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।
মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ
৬. সরকারী ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
৭. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. দূষিত শহর গুলোর আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে সেন্ড বক্ল এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।
১০. সিটি গভর্নেন্স এর প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ
১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।
১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশন (ক্যামস) এর ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।
১৩. গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
১৪. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ুদূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।
ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আলী নকি। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী, পবা’র যুগ্ম সম্পাদক ডা. লেনিন চৌধুরী, প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম এবং বায়ুমণ্ডলি দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর পরিচালক ও আইন উপদেষ্টা, অ্যাডভোকেট মারুফা গুলশান আরা।
সারাবাংলা/আরএফ/একে