Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরু চালের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের!

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:৪১

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশের বাজারে সরু চালের দাম কিছুতেই কমছে না। মোটা চালের দাম স্থির থাকলেও সরু চাল ক্রমেই চলে যাচ্ছে ভোক্তার নাগালের বাইরে। সরকারি হিসাবেই বছরের ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বাড়তি দামের একই রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। তবে বাজারে মোটা চালের দাম মোটামুটি স্থির রয়েছে। বাজারে মোটা চালের চাহিদাও কম বলে জানা গেছে।

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগের কথা জানালেও সহসাই সরু চালের দাম কমবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বর্তমানে ধানের দাম বাড়তি থাকায় বাজারে চালের বাজার চড়া। বোরো ধান না ওঠা পর্যন্ত মিনিকেট-নাজিরশাইল চালের বাজার এমন চড়াই থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকার তথ্য জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তারপরও কেন চালের দাম বাড়ছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন মন্ত্রী নিজেই।

সম্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা সফর করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তিনি রাজশাহীতে বলেন, এই মুহূর্তে চালের জাতীয় মজুত ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। স্বাভাবিক অবস্থায় এই মজুত ১০ লাখ মেট্রিক টন থাকে। তারপরও প্রতি সপ্তাহে চালের মূল্য বাড়ছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। এসময় তিনি বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন খাদ্য কর্মকর্তাদের প্রতি। পরদিন রংপুরেও তিনি একই কথাই বলেন।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে সব চালের দাম বেড়েছে, কথাটি ঠিক নয়। মোটা চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। সরু চালের দাম বাড়তি। এটি আসলে ক্রমাগতই বাড়ছে। আমরা এখন ২ হাজারের বেশি ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তারপরও বাজারে সরু চালের দাম কমছে না।’

বিজ্ঞাপন

সচিব বলেন, ‘দিনাজপুর ও রংপুরে আমরা চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন চালকল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু কোথাও কোন অবৈধ মজুত দেখিনি। আমরা তাদের সতর্ক করেছি, কোথাও কোন অবৈধ মজুত থাকলে সেই চাল যেন বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়া গত তিন মাসেও সরু চালের দাম বাড়েনি বলে মিলারা বলে আসছেন। কিন্তু বাজারে দেখা যাচ্ছে, মিল গেটের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেশি। আমরা এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব?’

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, সরু চাল (নাজির, মিনিকেট) বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। আর এক মাস আগে এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাস ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম কমেছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তবে এক বছর আগে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা। অর্থাৎ এক বছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত, যা শতাংশ হিসেবে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

টিসিবি বলছে, মাঝারি মানের চাল এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। মাস ব্যবধানে দাম কমেছে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে, এক বছর আগে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। কেজিতে এ ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা। যদিও টিসিবি বলছে, এ ধরনের চালের মূল্য বাৎসরিকভাবে অপরিবর্তিত।

এদিকে মোটা চাল (স্বর্ণা) এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, এক মাস আগেও ছিল একই দাম। সে হিসাবে মাসের ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অন্যদিকে, এক বছর আগেও এ ধরনের চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। টিসিবির এই তথ্য বলছে, বছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে এখন মিনিকেট ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছু দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। নাজির চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা। আটাশ ও পাইজাম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ ও ৪৮ টাকা কেজিতে। এ জাতীয় চালের দাম স্থির রয়েছে।

চালের দাম বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরান বাজার কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন চালের বাজার বাড়তি। মৌসুমের শেষের দিকে প্রতিবছরই মিনিকেটের দাম বাড়ে। এ বছরও বেড়েছে। সবাই এখন ধান কেনায় ব্যস্ত। তাই বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে চালের দামও। এখন মোটা চালের দাম কম থাকলেও মিনিকেটের দাম বাড়তে থাকলে অন্যান্য চালের দামও বাড়বে।’

তিনি বলেন, গত ১৫ দিন ধরে চালের বাজার মোটামুটি স্থির রয়েছে। যেভাবে হু হু করে বাড়ছিল, এখন আর সেই প্রবণতা নেই। নানামুখী উদ্যোগের কারণে এখন বাজার স্থির রয়েছে। তবে জানি না বাজার কতদিন স্থির থাকবে।

চাল ব্যবসায়ীদের এই নেতা জানান, মিনিকেট এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৯৫০ থেকে ৩০৫০ টাকায়। এই চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে। নাজিরের বস্তা এখন ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এ জাতীয় চাল। পাইজামের বস্তা ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকা, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। আর, বাজারে স্বর্ণা ৪০ থেকে ৪১ টাকা ও আটাশ ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে খাদ্য মজুত রয়েছে ২০ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে চাল ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টন, গম ২ লাখ ৭৪ হাজার টন ও ধান ৪৯ লাখ টন। গত বছর একই সময়ে এ মজুতের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৫ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৯৭ টন, ধান ৬ হাজার ১৬ টন এবং গম ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৯ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যের মজুত প্রায় তিন গুণ হলেও দিন দিন বাড়ছে চালের দাম।

জানতে চাইলে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর ধানের দাম বেশি। আমাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। আমরা এখনো প্রতি মণ এক হাজার ২০ থেকে এক হাজার ৪০ টাকা দরে ধান কিনছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর ধানের দাম প্রতি মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। দেশে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। আমরা চালের দাম কমাব কীভাবে? আমরা কী লোকসান (লস) দিয়ে দিয়ে ব্যবসা করব?

তিনি বলেন, মিনিকেট আমাদের এখানে ২৭০০ থেকে ২৯০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এর চেয়ে দাম কিছুটা কম ছিল। নাজির বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বস্তায়। গত তিন সপ্তাহে আমাদের এখানে চালের দাম বাড়েনি।

মিল গেটের দামের সঙ্গে বাজারের দামের পার্থক্য তৈরি হওয়ায় এ বিষয়ে নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাদ্য সচিব নাজমুনারা খানুম। তিনি বলেন, ‘মিল গেট থেকে কত টাকায় কিনে খুচরা বাজারে কত টাকায় চাল বিক্রি করতে পারবে— এমন নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। আমাদের এই নীতিমালা নেই। আমরা বাজারে আরও বেশি নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে ক্রমাগতই বাজার মনিটরিং বাড়াতে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।’

সারাবাংলার আরেক প্রশ্নের উত্তরে সরু চালের উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে সচিব বলেন, ‘ওএমসে মোটা চাল দেওয়া হয়। সেটি বাজারে প্রভাব ফেলে না। এখন নিম্ন আয়ের মানুষও চিকন চাল কিনছে। ওএমএস থেকে তেমনভাবে কেউ চাল কিনছে। এজন্য দেশে সরু চালের উৎপাদন বাড়ানো উচিত। ভবিষ্যতে ওএমএসেও সরু চাল দেওয়া ব্যবস্থা করার পরামর্শ এরই মধ্যে এসেছে। কিন্তু আমাদের সাইলো না থাকায় সরু চাল মজুত করা যাবে না। দুই তিন বছর পর সাইলো হলে সরু চাল মজুত করা যাবে। তখন হয়তো ওএমএসেও সরু চাল দেওয়া যাবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

চালের দাম চালের বাজার চালের মজুত নাজিরশাইল মিনিকেট মোটা চাল সরু চাল সরু চালের দাম

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর