বিএসএমএমইউ’র সিকোয়েন্সিংয়ে বেড়েছে ওমিক্রনের প্রভাব, আছে উপধরনও
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৩২
ঢাকা: দেশে বেড়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব। একইসঙ্গে ওমিক্রনের ভিন্ন ভিন্ন উপধরন ও ডেল্টার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বিভিন্ন নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে। তবে জানুয়ারি মাসে সংগ্রহ করা নমুনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রনের প্রভাব বাড়তে দেখা গেছে। তবে একইসঙ্গে গত বছর প্রভাব বিস্তার করা ডেল্টার প্রাধান্যও দেখা গেছে।
বিএসএমএমইউ’র এনাটমি বিভাগে জানুয়ারি মাসে সংগ্রহ করা ১৫৫টি জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ৩৭টি কোভিড-১৯ নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। ৮৯টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রনসহ এর নানা ধরনের উপধরনও পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৫৭ দশমিক ৪২ শতাংশ ওমিক্রন পাওয়া গেছে। তবে ৪২টি নমুনার সিকোয়েন্সিং ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট জিনব্যাংকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ থেকে অবশ্য এখনো এই জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এসব জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফল ঘোষণা করবেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনে সংক্রমণের মাত্রা কম ভেবে একে সহজভাবে নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। আর তাই অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরতে হবে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
১ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা ৩৬ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে একটি নমুনায় ওমিক্রনের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার উপস্থিতি দেখা গেছে। বাকি ১৫টির নমুনার ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
৬ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা ২৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ৬টি নমুনায় ওমিক্রনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এর মাঝে তিনটি নমুনায় ওমিক্রনের উপধরন যা বিএ১.১ নামে পরিচিত প্যাঙ্গোলিনে। দুইটি নমুনায় বিএ.১ ও একটি নমুনায় বিএ.২ উপধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ১৬টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ডেল্টার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। তবে তিনটি নমুনার ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৬০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করা হয়। এই সময়ের নমুনাগুলোর সিকোয়েন্সিংয়ে ৪৪টি ওমিক্রন শনাক্ত হয় যার মাঝে ৮টি বিএ.২ ও ১৪টি নমুনায় বিএ.১.১ শনাক্ত হয়। ১০টি নমুনায় ডেল্টা শনাক্ত হয়। তবে ছয়টি নমুনার ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
১৭ জানুয়ারি সংগ্রহ করা ১৯টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে একটি ডেল্টা শনাক্ত হয় ও একটি নমুনার সিকোয়েন্সিং ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে বাকি ১৭টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে ওমিক্রনের উপস্থিতি। এর মাঝে ৪টি নমুনার মাঝে বিএ.১.১ ও পাঁচটি নমুনায় বিএ.১ উপধরন দেখা গেছে।
১৮ জানুয়ারি সংগ্রহ করা ১৭টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে একটি মাত্র ডেল্টার উপস্থিতি দেখা যায়। ছয়টি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে বিএ.১.১ নামে পরিচিত ওমিক্রনের উপধরন দেখা গেছে। একটি মাত্র নমুনায় বিএ.১ এর উপস্থিতি দেখা গেলেও ৯টি নমুনায় বিএ.২ ওমিক্রনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
২৪ জানুয়ারি সংগ্রহ করা দুইটি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়েই ওমিক্রনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
বিএসএমএমইউ’র সিকোয়েন্সিং তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ওমিক্রনের প্রভাব। একইসঙ্গে বেড়েছে ওমিক্রনের উপধরণেরও প্রভাব।
নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উপধরন বলে পরিচিত বিএ.২। কোভিড-১৯ ভাইরাসের ওমিক্রনের নতুন এই উপধরন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রনের নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে, তারও একটি উপধরন বিশ্বের ৫৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে জানিয়েছে, এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি কিন্তু আগের তুলনায় বেশি সংক্রমক হতে পারে। আর বেশি সংক্রমক হলে ক্ষতি করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
এর আগে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গত ১৪ নভেম্বর সংগ্রহ করা একটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (বিএ.১ লিনেজ) শনাক্ত হয়। গত ১৪ নভেম্বর সংগ্রহ করা একটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়েও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর নয়, গত নভেম্বর মাসেই দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিল। তার আগে সরকারিভাবে জানানো হয়, দেশে করোনার সংক্রমণ প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় গত ৬ ডিসেম্বর সংগ্রহ করা দুইটি নমুনায়।
ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের তথ্য প্রকাশিত করা হয়। বিএসএমএমইউয়ে সিকোয়েন্সিং করা সেই নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়েছিল গত ১৪ নভেম্বর। ওয়েবসাইটের তথ্য আরও বলছে, ১৪ নভেম্বরই কেবল নয়, এর পরে সংগ্রহ করা আরও নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়েও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে বিএসএমএমইউ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে সর্বপ্রথম ২ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সংগ্রহ করা একটি নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তবে এই সিকোয়েন্সিং ফল জিআইএসএইডে আপলোড করা হয় ২৯ ডিসেম্বর। জিআইএসএইডে সর্বপ্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি আপলোড করা হয় ২২ নভেম্বর। হংকং থেকে ১৩ নভেম্বর সংগ্রহ করা একটি নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বলে ঘোষণা দেয়।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস
ওমিক্রন করোনাভাইরাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়